নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে নাÑজানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ রিটটি দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে আনীত অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পুলিশ কমপ্লেইন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন বা পিসিআইসি) গঠন করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও রিটে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সম্বলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে দাখিল করবেন বলেও নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়। আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে ১৫শ ২২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট (মোট ১ হাজার ৬৬৭ পৃষ্ঠা) দেওয়া হয়েছে। রিটে ৮টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত ৫৮৯টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ওই ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিচারবহির্ভূত হত্যা; হেফাজতে মৃত্যু; হেফাজতে নির্যাতন; গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়; খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি; ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন; চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট; চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়; জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ; মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাৎ; আটক বাণিজ্য; অপরাধীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া; মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ; মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি; তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণ; সাংবাদিক নির্যাতন; কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামিদের নাম বাদ দেওয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তাই রিট আবেদনে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।