নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সদরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরিপাড়ার প্রায় ৬০ একর উর্বর জমি অবৈধভাবে দখল নিয়ে আদালতের আদেশ সময়মতো না জানানোর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশ হাতে পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নাসরিন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে গতকাল রোববার রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নাসরিন। এর আগে গত ১৪ জুন কক্সবাজার সদরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরিপাড়ার প্রায় ৬০ একর উর্বর জমি অবৈধভাবে দখল ও ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ৬০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন আদালত। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল জারিসহ আদেশ দেন। আদালতের এই আদেশ কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কমিউনিকেট করতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে বলা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার যথাসময়ে আদালতের আদেশ কমিউনিকেট না করায় হাইকোর্ট তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। চলতি বছরের ১৪ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কক্সবাজারে অবৈধভাবে ভরাট হচ্ছে ৬০ একর ফসলি জমি, জমির মালিকরা অসহায়, প্রশাসন নীরব’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করে আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার সদরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরিপাড়ার প্রায় ৬০ একর তিন ফসলি উর্বর জমি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার দূরত্বে গড়ে ওঠা রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক চিন্তায় আবাসন প্রকল্প গড়তেই আইন উপেক্ষা করে রাত-দিনে এসব জমি ভরাট করছে ভূমিদস্যু চক্র। শতাধিক কৃষক পরিবারের ‘অন্ধের যষ্টি’ তিন ফসলি জমি ভরাট থেকে রক্ষায় জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। অথচ ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার’ আইনে ফসলি জমি ভরাট করে কোনো স্থাপনা বা আবাসন প্রকল্প বা শিল্পকারখানা গড়ে তোলার কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন মাটি ভরাট রোধে উপযুক্ত আইন পাচ্ছে না বলে দাবি করলেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রমতে, মধ্য ঝিলংজা ব্লকের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী প্রায় ৬০ একর জমি পলি দোআঁশবেষ্টিত অতি উর্বর ভূমি। এসব জমিতে আমন ও বোরোর মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার মণ ধান উৎপাদন হতো।