নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বজনরা আবেদন করলেই নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আজ শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান। খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় দেওয়া মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তাদের আবেদনের অপেক্ষায় আছি। আবেদন করলে অবশ্যই মুক্তির মেয়াদ বাড়বে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর একই মামলার আপিলে তার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর মোট পাঁচবার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদের শর্তে উল্লেখ আছে, এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন ও দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। সবশেষ গত ২৩ মার্চ খালেদা জিয়ার দ- স্থগিত করে আগের দুটি শর্তে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। খেলাপি ঋণের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনীতির শত্রু হিসেবে খ্যাত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। আনিসুল হক বলেন, ঋণ খেলাপি মামলাজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে আমাদের অবশ্যই ঋণ খেলাপি মামলাজট খুলতে হবে ও এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ বাড়ার লাগাম টানতে হবে। ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধন করে আদালতের বাইরে এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছে। মন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মামলার পক্ষগণের অনাগ্রহের কারণে এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না। ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এডিআর পদ্ধতিকে আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপণও রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামাজিক অপরাধ, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক জীবনের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো নিবিড়ভাবে জড়িত। এ ছাড়া ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ব্যতীত রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায় না। মামলাজটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, দেশের আদালতগুলোতে দায়ের করা সিভিল মামলার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি সম্পর্কিত। অনেক ফৌজদারি মামলার মূলেও রয়েছে ভূমি বিরোধ। এসব মামলার বিচার পাওয়ার জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীকে আদালতে ধরনা দিতে হয়। এতে যে কেবল তাদের সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে তা নয়, মূল্যবান কর্ম ঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে। যে সময়ে তাদের উৎপাদনের কাজে থাকার কথা, সে সময় আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে বিচার পাওয়ার প্রহর গুণতে হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিচারকরা এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন এবং জনগণকে দ্রুত ন্যায়বিচার দিয়ে তাদের বিচার পাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব করবেন। প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এমন এক স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গতিশীল বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন বিচারক হিসেবে আপনাদের ওপরই নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, এই নির্ভরতা আপনাদের যেমন দায়িত্বশীল করেছে, তেমনি মর্যাদাবানও করে তুলেছে। আপনাদের দায়িত্ব পালনে আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি মাত্র। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদের দাপ্তরিক সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধানসহ পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোটাও অপরিহার্য। আর পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সে কারণে আমরা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে যাচ্ছি। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, আইন মন্ত্রণালয় এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।