• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ইউপি নির্বাচন: নিহতের সংখ্যা হাফ-সেঞ্চুরি অতিক্রম করলো

Reporter Name / ৩২০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত ও সহিংসতা অব্য্যাহত আছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা অর্ধশত অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রোববার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় একজনের মৃত্যু হয়। জানা যায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরকেওয়ার ইউপির নৌকার প্রার্থী আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছিল। এর মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোববার সন্ধ্যায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। নৌকার পান্ডাদের এই স্ববিরোধীতায় উভয় পক্ষের ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে আবদুল হক (৫০) নামের ওই গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফসার উদ্দিনের সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চলমান ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৫২ জন নিহত হলো। এই ঘটনার একদিন আগে যশোরের চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষে শওকত আলী খাঁ (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে সূত্র জানায়। এই ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের পরাজিত প্রার্থী পলি পারভীন ও তাঁর ছেলে ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। যশোরের হাকিমপুর ইউনিয়ন ছাড়াও বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুই সমর্থক হযরত আলী (২৯) ও মাহবুব হোসেনকে (৩০) কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রোববার দুপুরে খলসী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পিরোজপুরেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পিরোজপুরের কাউখালীর চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহামুদ খান খোকনের সমর্থকদের ওপর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বজলুর রহমান নান্নুর সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে চিরাপাড়া টেম্পোস্ট্যান্ডে এ হামলায় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাইসহ সাতজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত নৌকার সমর্থক মওদুদ খান, মামুন মোড়ল ও মিন্টু তালুকদারকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর ও বিদঘুটে অনেক ঘটনাও ঘটছে জায়গায় জায়গায়। সূত্র জানায়, জীবন্ত মোরগ নিয়ে প্রচারণা চালানোয় এক ইউপি সদস্যপ্রার্থীকে তিন হাজার টাকা ও ভোটারদের খিচুড়ি খাওয়ানোয় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার সন্ধ্যায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়রামপুর ইউপিতে বাগাতিপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত আঞ্জুমান এ আদালত পরিচালনা করেন। দ-প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন দয়রামপুর ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহাবুল ইসলাম ও একই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী এনামুল হক। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় বাটিকামারি গ্রামে এনামুল হক জীবন্ত মোরগ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তিন হাজার টাকা অর্থদ- দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রার্থী জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। জীবন্ত প্রাণী নিয়ে যে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যায় না এ বিষয়ে প্রার্থী এনামুল হোক অবশ্য ছিলেন অজ্ঞ। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘আমার নির্বাচনী প্রতীক মোরগ। সরল বিশ্বাসে আমি মোরগ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলাম। জীবন্ত মোরগ নিয়ে প্রচারণা করা যাবে না, এমনটা আমার জানা ছিল না।’ একই সময় বাটিকামারি বাজারে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহাবুল ইসলাম ভোটারদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করেছেনÑএমন খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ওই প্রার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদ- করা হয়। তিনিও ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করেছেন। এদিকে, তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় ১১ জনকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দলীয় পদে থেকে যাঁরা ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের পদ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় পদে থেকে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদের সর্তক করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া ১১ জন হলেন দিঘী ইউপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আখতার উদ্দিন আহমেদ, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নুসরাত ইসলাম, বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসমত আলী, একই ইউনিয়নের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদ, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল হামিদ, পুটাইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল জলিল, একই ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি সোয়েব আহম্মেদ, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের এবং একই ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাফর ইমাম শাহাজাদা, হাটিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মিজানুর রহমান এবং আটিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নার্গিস আক্তার। এর আগে দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় আওয়ামী লীগের আটজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁদের মধ্যে জার্মিতা ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেন এবং শায়েস্তা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হালিম চেয়ারম্যান নির্বাচত হন। অন্যদিকে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক থাকছে না বলে জানা গেছে।
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের উপস্থিতি ও তাদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান, জামালপুর জেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগসহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী সবার উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ ধাপে মাদারগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রতীক থাকছে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category