নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ে বিষোদগার করায় বিএনপির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে বর্তমান ইসি, নবগঠিত সার্চ কমিটি এবং ইসি গঠন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিষোদগার ও অবান্তর বক্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আইন অনুযায়ী গঠিত ইসি রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। সংবিধানে ইসিকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে কমিশনের প্রতিটি সিদ্ধান্তই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তাই ইসির প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ দেশের সংবিধান পরিপন্থী। যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ না কেউ সংক্ষুব্ধ হতেই পারে, কিন্তু তা প্রকাশের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। আর সে পথে না গিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ জাতীয় বিষোদগার রাষ্ট্র, সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তিমূলে আঘাত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য রেগুলেটরি বডি বা রেফারির মতো। খেলায় কোনো দল খারাপ খেললে অনেক ক্ষেত্রে তারা রেফারিকে দোষারোপ করে, বিএনপির অবস্থাও অনেকটা সেরকম। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার হওয়া উচিত বলে বিএনপি মহাসচিবের যে মন্তব্য, তা দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ পরিপন্থী। পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অপকৌশল গ্রহণ করায় ইসির দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে যদি কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে থাকে তার সব দায়ভার বিএনপিকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্বাধীন ইসি প্রতিষ্ঠার বিধান সংযোজিত হয়। সে সময় বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখা হতো। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ইসির ওপর ন্যস্ত করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনি মোশতাক-জিয়া চক্র অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর ইসিকে ধ্বংস করে। স্বৈরশাসক জিয়া অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিকৃষ্টতম প্রহসনে রূপ দেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন পরবর্তী স্বৈরশাসক এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের পর বেগম খালেদা জিয়া একইভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কলুষিত করে তোলেন। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন গঠিত অন্তত দু’টি ইসিকে (কে এম সাদেক ও এম এ আজিজ) সম্মিলিত জনরোষের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে বিএনপি। ওবায়তুল কাদের বলেন, ইসিকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও প্রশাসনিক কাঠমো বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনসহ যা কিছু উন্নয়ন করা হয়েছে তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। ২০০৯ সালের আগে ইসি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি সংস্থা ছিল। ২০০৯ এর পরে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোট ব্যাংক বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষমতা দখলের উপায়ন্তর না পেয়ে জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সাহস হারিয়ে ফেলে। ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আন্দোলনের নামে শত শত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিএনপি-জামাত অশুভ জোট। তারই অংশ হিসেবে বিএনপি গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি এবং সাংবিধানিক বিধান ও আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির প্রতি জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। তাই জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত বিএনপি সার্চ কমিটির প্রতি বিরূপ মন্তব্য ও লাগাতার অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।