• শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান-কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়োগের প্রশ্নফাঁস

Reporter Name / ১৫৯ Time View
Update : শনিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে পাঠানো হয়েছিল। বাইরে থেকে সেই ফাঁসকৃত প্রশ্নের উত্তর আবার পাঠানো হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কাছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংস্থাটির একজন বরখাস্তকৃত কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত চক্রের সাত সদস্য ও তিন পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ৬টি ইয়ার ডিভাইস, ৬টি মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার, ৫টি ব্যাংকের চেক, ৭টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ৬টি বাটন মোবাইল, ১৮টি প্রবেশপত্র ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া ৩ সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য গত শুক্রবার দুপুর ৩টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এনএসআই আগে থেকে অসাদু কার্যকম ও জালিয়াতি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মধ্যে গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ ও এনএসআই জানতে পারে একটি অসাদু চক্র নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চারটি টিম রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানের মধ্যে কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুই পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে কাফরুল থানাধীন সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের খসড়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে অন্যান্য আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) অডিটর (বরখাস্ত)। মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। হাফিজ আক্তার আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, চক্রটির একটি গ্রুপ পরীক্ষার আগে থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও অর্থ হাতিয়ে নেয়। নগদ, রকেট ও বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও চাকরি পাইয়ে দিতে অর্থ লেনদেন হয়। টার্গেটকৃত পরীক্ষার্থী প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয়। যেহেতু এমসিকিউ পরীক্ষা, তাই এমসিকিউ পরীক্ষায় পাশ করার পরই ভাইভা। তাই এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা নিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। নিয়োগ পাবার পর বাকি টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতি সম্পর্কে ডিবি প্রধান বলেন, চক্রের আরেকটি গ্রুপ ইলেট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টারকার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইল টার্গেটকৃত পরীক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় পরীক্ষার্থীদের কাছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর মাহমুদুল হাসান আজাদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে বরখাস্ত হন। নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও প্রশ্নফাঁস সংক্রান্তে ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল। গ্রেপ্তার আসামিরা অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোস্যাল অ্যাপস, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁস করে দেওয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্টওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের কাজ করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা এর আগে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ¦ালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে এবং নগদে হাতিয়ে নিয়েছে। পরীক্ষা বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরই সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতি করেই জড়িতদের কয়েকজন বরখাস্ত হয়ে জেলও খেটেছে। বগুড়ার ধুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপা ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ভূমিকা ছিল মধ্যস্থতার কাজ করা। একটি গ্রুপ অর্থ সংগ্রহ করেছে। আরেকটি গ্রুপ ডিভাইস সরবরাহ করেছে। মাহবুবা নাসরীন রুপা নিজে পরীক্ষা দিয়েছে, সঙ্গে অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইস সরবরাহের কাজ করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে চক্রের মধ্যে শিক্ষার্থী তিনজন, চক্রের সদস্য সাতজন। ১৮ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ শিক্ষার্থীর মাঝে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category