নিজস্ব প্রতিবেদক :
এখনো ছাপাখানায় রয়ে গেছে সরকারি বিনামূল্যের বিপুলসংখ্যক পাঠ্যবই। ফলে নতুন শিক্ষাবর্ষের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক শিক্ষার্থী বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই পায়নি। আবার অনেকে আবার আংশিক বই পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো বই বিতরণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও এখনো টও্য় এক কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়নি। ফলে এতোদিন বই ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হয়েছে। যদিও বিগত ২০১০ সাল থেকেই সরকার বছরের প্রথমদিনই উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে। তবে ১১ বছর পর করোনা মহামারীর কারণে গতবছর পাঠ্যবই বিতরণের উৎসব করা যায়নি। একইভাবে চলতি বছরও উৎসব ছাড়াই বই বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে বছরের টওথমদিন থেকেই বই বিতরণ কার্যক্রম চলছে। তার আগে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সূত্র জানায়, বিগত ১২ বছরে সরকার ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আর এবার বিতরণ করা হচ্ছে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ২৭৭টি বিনামূল্যের বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এবার ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২টি বই পাবে। কিন্তু এখনো বিভিন্ন শ্রেণীর বই শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণীর ১৪টি বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সবই দেয়া হলেও সপ্তম শ্রেণীর ১৪টির মধ্যে ৪টি, অষ্টম শ্রেণীর ১৪টির মধ্যে ৯টি এবং নবম শ্রেণীতে ১৪টির মধ্যে মাত্র ৮টি বই দেয়া হয়েছে। বই উৎসবের তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের সব বই দেয়া হয়নি। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে বই পেয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা বই নিতে বিদ্যালয়ে এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। আর কবে নাগাদ বই দেয়া হবে তাও নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। এভাবে সারাদেশে লাখ শিক্ষার্থীকে আরো কতোদিন নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে গত বছরের শেষদিকে বই ছাপা কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধির কারণে জানুয়ারির ১ তারিখে সবাইকে বই দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে যাবে। বাকি ৫ শতাংশ বই ৭ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো অনেক বইই ছাপার বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিকের সব বই গত ডিসেম্বরের মধ্যেই ছাপার কাজ শেষ হয়ে সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, প্রায় ৩৫ কোটি বইয়ের মধ্যে ৯৪ লাখ বই প্রেসে রয়ে গেছে। তবে তার মধ্যে অনেক বই ছাপা হয়ে গেলেও বাঁধাই কাজ বাকি আছে। বাকি সব বই উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। অন্যবার ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই সারাদেশে পৌঁছে যায়। কিন্তু এবার বার বার রিটেন্ডারের কারণে ছাপার কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। এবারের বই ছাপার প্রথম ট্রেন্ডার দেয়ার পর কোভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ নানা কারণে তাতে সাড়া মেলেনি। ওই কারণে প্রায় ৭০ ভাগ কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে রিটেন্ডার করতে হয়েছে। তবে আশা করা যায় চলতি মাসের মধ্যেই সব বই ছাপার কাজ শেষ হবে। যদিও যথাসময়ে বই ছাপানোর জন্য প্রতিবছরই উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে তা বাস্তবায়ন হয় না। গতবছরও উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এবারও বার বার পুনঃ টেন্ডারের কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে।