নিজস্ব প্রতিবেদক :
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি সেবার মান সমুন্নত রেখে আরও জনবান্ধব সেবা দেওয়ার জন্য কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান। আজ শনিবার নিউইয়র্কের কনস্যুলেট অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ – যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি, ডায়াসপোরা কূটনীতি এবং সাংস্কৃতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও তিনি কনস্যুলেটের নিজস্ব ভবন ক্রয়ের প্রক্রিয়া বেগবান করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি সরকারের জনবান্ধব সেবাকে আরও মানসম্মত ও দ্রুততার সঙ্গে প্রদানের পরামর্শ দেন। কনসাল জেনারেল প্রতিমন্ত্রীকে কনস্যুলেটের চলমান সার্বিক কর্মকা- সম্পর্কে অবহিত করেন এবং প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মনোয়ার হোসেন। কনস্যুলেটে গেলে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর তিনি কনস্যুলেটের সব শাখার কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন। কনস্যুলেটের বর্তমান কর্মকা- এবং নিয়মতান্ত্রিক সেবা প্রদান কার্যক্রমে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত,, জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগদান করার উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে নিউইয়র্ক সফর করছেন।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আয়োজিত ‘সংঘাত ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত বিতর্কে গত ১৯ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় উত্তম চর্চাগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অন গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’এ যোগ দিয়েছেন। শাহরিয়ার বলেন, আমরা কৃষি ও খাদ্য সুরক্ষার উত্তম চর্চাগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’ তিনি কৃষি খাতে রূপান্তর এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরে বলেন এর ফলে গ্রামীণ উন্নয়ন, প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সর্বত্র নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সকলের একসাথে কাজ করা অপরিহার্য, যাতে কেউ পিছনে পড়ে না থাকে। প্রতিমন্ত্রী উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর খাদ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। এ ক্ষেত্রে তিনি উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে আরো বেশি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রাপ্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন। যুদ্ধ ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে যাতে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ অবকাঠামো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় তা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা পরিষদ রেজুলেশন ২৪১৭’ কে সমর্থন করি যাতে সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় ‘যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে বেসামরিক লোকদের অনাহারে থাকা’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মানবিক কাজে নিয়োজিত সংস্থা ও কর্মীগণের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিকুলতা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে উন্নত দেশগুলোকে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এদিকে প্রতিমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ শাহীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। প্রথম আন্তর্জাতিক অভিবাসন পর্যালোচনা ফোরামের ‘অগ্রগতি ঘোষণা’ বিষয়টি চুড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কো-ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাকে নিয়োগ এবং তাঁর উপর আস্থা রাখার জন্য সাধারণ পরিষদ সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জিবুতির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী নূহ হাসান এর সাথেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য মানবাধিকার কাউন্সিল নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থীতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। শাহরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিভিউ ফোরামে (আইএমআরএফ) উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।