নিজস্ব প্রতিবেদক :
কে কোথায় কী করছেন, সব খবর দলীয় প্রধানের কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নিজ দপ্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো অনিয়ম, অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। যেটা দেশবাসী এরইমধ্যে প্রমাণ পেয়েছে। অপরাধী যেই হোক, অপকর্ম যেই করুক, তিনি যেই হোন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। সেটা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, অপরাধী দলীয় পরিচয় দেয়। কিন্তু সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ কখনো কোনো অপরাধীর পক্ষে দাঁড়ায়নি, কখনো কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। বিভিন্ন হত্যাকা- ও খুনের ঘটনায়ও কিন্তু ছাত্রলীগের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবরার হত্যার ব্যাপারে প্রায় সবাই ছাত্রলীগ করতো, সেখানেও কিন্তু সরকার কাউকে ছাড় দেয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের কোনোরূপ হস্তক্ষেপ নেই সেখানে। আমাদের অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। সাজা হয়েছে কারও কারও। স্পষ্টভাবে বলছি, অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে শূন্যসহিষ্ণু নীতিতে অটল। চলমান রয়েছে সরকারের শুদ্ধি অভিযান। কে কোথায় কী করছেন, সব খবর দলীয় প্রধানের কাছে রয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা বিদ্রোহে মদত দিচ্ছে, পেছন থেকে যেসব মন্ত্রী-এমপি কলকাঠি নাড়ছে, প্রত্যেকের নাম কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে তালিকা চলে এসেছে। সময়মতো প্রত্যেকেরই এজন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। করোনাভাইরাসের যত ডোজ টিকা দরকার বাংলাদেশকে তা ভারত সরবরাহ করবে বলে জানিয়ে
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত থেকে আরও পাঁচ মিলিয়ন ডোজ টিকা আসবে। এগুলো চুক্তির টিকা কি না- এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে তো চুক্তিই এটা, যা লাগে সব দেবে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের এ ব্যাপারে দুর্ভাবনার কারণ নেই। বাংলাদেশের যত ডোজ টিকা দরকার ভারত সরবরাহ করবে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ভারত আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এককভাবে এগিয়ে যাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে সংশয় ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক আমাদের জন্য শুভ ফল বয়ে আনেনি। এ বৈরী সম্পর্ক আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। আমরা আজ সীমান্তের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। কারণ আমরা এ অবিশ্বাস ও সংশয়ের দেয়ালটা ভেঙে দিয়েছি। মন্ত্রী আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশের ছিটমহল বিনিময় এত শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি, যেটা আমাদের এখানে হয়েছে। আমাদের (বাংলাদেশ-ভারত) সম্পর্কের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও আছে। সম্পর্ক ভালো থাকলে আলোচনার সুযোগ থাকে। সমস্যা যা আছে তা আলোচনা করে সমাধান করা যায়। কিন্তু বন্ধুত্ব যদি অবিশ্বাস ও সংশয়ে ঢাকা থাকে তবে কোনো কিছু এগোয় না। দু’দেশের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর আন্তরিকতাপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে দলীয় পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছেন। দলীয় পদ আছে তার। তবে ঢাকায় কোনো পদ নেই। তিনি জামালাপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। ওই পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, যতোটুকু জানি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ আজ সভা ডেকেছে। সভাটি ডা. মুরাদ হাসানকে নিয়েই। তার বিষয়টি সেখানে প্রধান আলোচ্যসূচি। তারা (জেলা কমিটি) সম্ভবত তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেবে। এ রকম সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। (পরবর্তীতে সেই সভা থেকেই মুরাদকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়)। মুরাদ হাসানের দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ বিষয়ে আমরা সেন্ট্রালি (কেন্দ্রীয় কমিটি) সিদ্ধান্ত নেবো। পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেবো। যেভাবে গাজীপুরের মেয়র এবং ওই মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ছাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তার (মুরাদ হাসান) বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। সংসদীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি পরের ব্যাপার। এখন আপাতত যেটা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরে যেতে হলো। দলেও একটা পদে ছিল, সেখানেও অব্যাহতি পাচ্ছে। এমপি পদে থাকার বিষয়েও যদি সেরকম গুরুতর কোনো অভিযোগ আসে, সেটা সংসদের স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।