• শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

গণপরিবহনে হয়রানির শিকার ৬৩ শতাংশ নারী

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : শনিবার, ৪ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার গণপরিবহনে কিশোরী ও তরুণীরা বেশি হয়রানীর শিকার হচ্ছে মধ্যবয়সী পুরুষ যাত্রীদের হাতে। এছাড়া, সহযোগিতা করার কথা বলেও নারীদের স্পর্শ করার চেষ্টা করে পরিবহনকর্মীরা। এসব হয়রানির শিকার কিশোরী-তরুণীরা এ কারণে রীতিমতো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছে পড়ছেন। শুক্রবার আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়। সংগঠনটির গবেষণা-জরিপে উঠে এসেছে এ-সংক্রান্ত অনেক তথ্য। গবেষণায় ঢাকার গণপরিবহনগুলোর মধ্যে বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শহরের আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার ১৩-৩৫ বছর বয়সী নারীরা এ জরিপে অংশ নিয়েছিল। আঁচল-এর গবেষণায় দেখা গেছে, গত ছয় মাসে ৬৩.৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী গণপরিবহনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৪৬.৫ শতাংশ বলেছেন তাদেরকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ১৫.৩ শতাংশ বুলিং, ১৫.২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৪.৯ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্য এবং ৮.২ শতাংশ বডি শেমিং-এর শিকার হয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। যৌন নিপীড়নের শিকার ২০.৪ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা গাড়ির হেলপারের হাতেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৩ শতাংশ হয়েছেন হকারের মাধ্যমে এবং ১.৬ শতাংশ চালকের মাধ্যমে। কারা বেশি যৌন হয়রানি করছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে ৬১.৭ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানিয়েছেন, তারা ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বেশি। ৩৬.৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কিশোর ও যুবকদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সমীক্ষায় ৬০.৯ শতাংশ নারী জানিয়েছেন বাসে ওঠা-নামার সময় অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও হেলপাররা তাদের স্পর্শ করেছে। ২৪.৬ শতাংশ নারী জনিয়েছেন তাদেরকে গত ছয় মাসে অন্তত তিনবার এই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত স্পর্শের শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে গাড়িতে ওঠানোর ক্ষেত্রে হেলপারদের নেমে দাঁড়ানো আবশ্যক হলেও তারা গেটে দাঁড়িয়ে পিঠে হাত দিতেই উদ্যত হয়। জরিপে ১১.৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, গণপরিবহনে চলাচলের সময় তাদের আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হতে হয়েছে। ৩০.৮ শতাংশ জানিয়েছেন যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও অনেক যাত্রী তাদের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ইচ্ছাকৃত ধাক্কার শিকার হয়েছেন ১৪.২ শতাংশ। ১৩.৮ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। পরিসংখ্যান মতে, গণপরিবহনে হালকা ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নারীরা বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সংখ্যা ৩২.৮ শতাংশ। আবার বসে থাকা অবস্থায় যৌন হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন ২২.৯ শতাংশ ও ওঠা-নামার সময় ১১.৩ শতাংশ। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ৩৪.৮ শতাংশ বলেছেন, ভয় পেয়ে তারা নীরব থেকেছেন। ২০.৪ শতাংশ পরে আর গণপরিবহনে চড়েননি। ৪.২ শতাংশ পাশের যাত্রীর সহায়তা চেয়েছেন। মাত্র ০.৫ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর ৩৬.৯ শতাংশ নারী বলেছেন অন্যযাত্রীরা যৌন হয়রানির মতো ঘটনাকে উপেক্ষা করে গেছেন। ২ শতাংশ জানিয়েছেন গণপরিবহনের অন্য যাত্রীরা নিপীড়নকারীকে সমর্থনও করেছেন। সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, ২১.২ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী গণপরিবহন ব্যবহারের সময় যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে পরে ট্রমাটাইজড হয়েছেন। ২৯.৪ শতাংশের মনে গণপরিবহন ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬.৪ শতাংশ ভুগছেন হীনম্মন্যতায় ও ১৩.৮ শতাংশ বিষণ্ণতায়। প্রয়োজন নারীকেন্দ্রিক সেবার প্রসার গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হওয়ার পর সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ জানিয়েছেন ওই পরিবহনের কেউ তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। বাকিরা জানিয়েছেন তারা অন্যান্যের সাহায্য পেয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সাহায্য পাওয়ার জন্য ৯৯৯-এ কল করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। ৬২.৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী হেল্পলাইন সম্পর্কে জানলেও সহায়তা নিয়েছেন মাত্র ২.৫ শতাংশ। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৭.৬ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী মনে করেন কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে নারীদের জন্যে সংরক্ষিত বাস বাড়ানো উচিত। ৯৪ শতাংশ মনে করেন নারীদের সংরক্ষিত সিটও বাড়ানো প্রয়োজন। নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। সেটা বাসায় হোক, রাস্তাঘাটে কিংবা গণপরিবহনে, বলেছেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, এ জরিপে যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এই সামাজিক সমস্যাকে পুরোপুরি মোকাবিলা করতে হলে আমাদের নৈতিকতা ঠিক করতে হবে আগে। আঁচল ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সামিরা আক্তার সিয়াম বলেন, নিরাপত্তাহীনতা একজন নারীর জন্য বড় একটি ব্যাপার। আর তা যদি হয় প্রতিদিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে, তবে এতে মারাত্মক মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন একজন নারী। হয়রানি প্রতিরোধে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। এরমধ্যে অন্যতম হলে আসন সংখ্যার বেশি যাত্রী না নেওয়া। প্রতিটি গণপরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে বাস স্টাফসহ যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা। গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category