নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষের আয় তলানিতে পড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ও পণ্যমূল্য বাড়ায় মানুষের খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতে সঞ্চয় থাকছে না। যে কারণে ছোট ও মাঝারি গ্রাহকদের ব্যাংকে আমানত কমে গেছে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ ডিসেম্বরে ২৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়েছে যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ২৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২১৪ কোটি টাকা ছিল। দরিদ্রদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমানত ২০২২ সালের জুন মাসে ২০১.৩৭ কোটি টাকায় নেমে আসে যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২১৪ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালের জুনে ২৩৮.৮৪ কোটি টাকা ছিল। ২০২০ সালের জুনে জমার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের জুনে ৩৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চরম দরিদ্র ব্যক্তিদের রাখা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৪.৮৩ লাখে নেমে এসেছে যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া আগের তিন মাসে ৩৫.৬১ লাখ ছিল। ২০২২ এবং ২০২১ সালের শেষে যথাক্রমে ৩৫.৩৭ লক্ষ এবং ৩৪.৮৬ লক্ষ এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ছিল। বাংলাদেশে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত সহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে যদিও দেশটি বেশ কিছুদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের বৃহৎ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩,৩২২ বেড়ে ডিসেম্বরের শেষে ১,১৬,৯০৮-এ পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১,১৩,৫৮৬ এবং ডিসেম্বর ২০২২-এ ১,০৯,৯৪৬ ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি প্রান্তিক ব্যক্তিদের ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকার মতো আমানত সহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয়। নন-ফ্রিল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক, অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধাভোগী সহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য উপলব্ধ। ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরাও ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এই অ্যাকাউন্টগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা চালু করা হয়েছিল যাতে কোনো চার্জ ছাড়াই লোকেদের টাকা রাখার জন্য একটি নিরাপদ জায়গা দেওয়া হয়। ব্যাংকাররা বলেছেন যে সরকারের ভর্তুকি এবং বেতনের বর্ধিত বিতরণের কারণে নন-ফ্রিল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমানত কিছুটা বেড়েছে। ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক পর্যন্ত, সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অংশের সাথে থাকা ৬৯.৫২ লাখ এনএফএ-কে ভর্তুকি/বেতনের ১,০০০ কোটি টাকার বেশি বিতরণ করেছে। ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা সহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমার মোট পরিমাণ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৩,৮৪৯ কোটি টাকা থেকে ১৮.৬ শতাংশ বেড়ে ৪,৫৬৫ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৩,৫৬৪.৮৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২.৬১ কোটি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে ২.৭ কোটি হয়েছে। নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টগুলি বৈদেশিক অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রিপোর্টিং ত্রৈমাসিকের শেষে এই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈদেশিক রেমিটেন্সের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়ে ৬৭৪.৬ কোটি টাকা হয়েছে। এই ত্রৈমাসিকে, ১,৬৭,৩৪৯টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আগের তিন মাসের তুলনায় ৪.১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে
বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। গত ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি বা ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কোটিপতি আমানতকারীদের হিসাবে জমার পরিমাণ বাড়লেও ছোট আমানতকারীদের হিসাবে জমার পরিমাণ কমেছে। গত মাসে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন মাস পরপর প্রকাশ করে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ওই সময়ে ব্যাংকগুলোতে সার্বিকভাবে আমানত প্রবাহ বেড়েছে। তবে আমানত বাড়ার প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। বড় আমানতকারীদের আমানত বেড়েছে। কারণ আমানতের বিপরীতে মুনাফা বা সুদ যোগ হয়েছে। এছাড়া যেসব হিসাব কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল সেগুলোতেও মুনাফা যোগ হয়ে কোটি টাকার ওপরে চলে গেছে। এসব কারণে কোটিপতি আমানকারীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। গত বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি। বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।