• মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

চুক্তি বাতিলের মামলা ও আইনগত প্রতিকার

Reporter Name / ২৩৭ Time View
Update : শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

ছগির আহমেদ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিষয়বস্তু ইকুইটি থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ১৮৭৭ সালে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন প্রণয়নের সময় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সংক্রান্ত ইকুইটির বিষয়গুলি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। যা সিভিল আইনের মূল বিষয়। সিভিল আদালতের অধিকাংশ মামলা এই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুসারে পরিচালিত হয়।
উদাহরণ- স্বত্বের মামলা, দখল উদ্ধারের মামলা, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলা, দলিল সংশোধনের মামলা, চুক্তি বাতিলের মামলা, দলিল বাতিলের মামলা, ঘোষণামূলক মামলা, নিষেধাজ্ঞা মামলা ইত্যাদি। আজকের আলোচনা চুক্তি বাতিলের মামলা ও তার আইনগত প্রতিকার। ক. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি চুক্তি বাতিল বা রদ করার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে এবং আদালত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল বা রদের আদেশ দিতে পারবেন-
(১) যেক্ষেত্রে চুক্তিটি বাতিলযোগ্য বা বাদী কর্তৃক বিলোপযোগ্য [ঞবৎসরহধনষব নু ঃযব ঢ়ষধরহঃরভভ]।
উদাহরণ- ঢ নামে এক ব্যক্তি একটি মাঠ ণ এর নিকট বিক্রি করল। মাঠের উপর দিয়ে যাতায়ত করার অধিকার সম্পর্কে ঢ এর সরাসরি ব্যক্তিগত জ্ঞান ছিল। কিন্তু ঢ এটা ণ এর নিকট গোপন করলো। এক্ষেত্রে ণ চুক্তি রদ করিয়ে নেয়ার অধিকারী।
(২) যেক্ষেত্রে চুক্তিটি বেআইনী এবং বাদীর চেয়ে বিবাদী অধিকতর দোষী।
উদাহরণ- ঢ নামে একজন এডভোকেট তার মক্কেল ণ-কে তার পাওনাদারগণকে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে সম্পত্তি ঢ এর নিকট হস্তান্তর করতে প্ররোচিত করলো। এখানে পক্ষগণ সমানভাবে দোষী নয়। এক্ষেত্রে ণ হস্তান্তরের দলিল রদ করিয়ে নেয়ার অধিকারী।
(৩) যেক্ষেত্রে আদালত বিক্রয় বা ইজারা চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য ডিক্রী প্রদান করেছেন, কিন্তু ক্রেতা বা ইজারাগ্রহীতা বিক্রেতা বা ইজারাদাতাকে আদালতের নির্দেশ মতো অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
(৪) সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৬ ধারা অনুসারে চুক্তির কোন পক্ষকে যদি চুক্তি না হওয়া অবস্থায় পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা না যায় তাহলে আদালত লিখিত চুক্তি ভুলের জন্য রদ করে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে ডিক্রী প্রদান করতে পারেন।
(৫) চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলায় আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ প্রদান না করতে পারলে চুক্তি রদ করার ডিক্রী প্রদান করে থাকেন।
(৬) অনেক সময় চুক্তির অংশবিশেষ রদ করা যায়। যেমন- বিক্রয় চুক্তির অংশবিশেষ রদ করা হলে তা গ্রহনযোগ্য। [অওজ ১৯২৮ ঝরহফ. ৬১]
তাছাড়া চুক্তি আইন ও ন্যায়পরায়ণতার বিধান অনুসারে নিম্নলিখিত চুক্তিগুলোও রদ বা বাতিল ঘোষণা করা যায়। যথা:-
(১) নাবালকের পক্ষে চুক্তি করা হলে নাবালক সাবালক হওয়ার পর চুক্তি বাতিল বা রদ করতে পারে।
(২) নৈতিকতা ও জননীতির পরিপন্থী চুক্তি।
(৩) প্রতিদানবিহীন চুক্তি।
(৪) অবৈধ প্রভাব, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণার মাধ্যমে হাসিল করা চুক্তি।
(৫) ভুল করে যে চুক্তি করা হয় তা বাতিল বা রদ করা যায়।
খ. চুক্তি রদের মামলা করতে পারে কে
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারা অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ চুক্তি রদ বা বাতিলের মামলা করতে পারে। যথা:-
(১) চুক্তির যে কোন পক্ষ চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে।
(২) চুক্তিতে স্বার্থ আছে এমন কোন ব্যক্তি চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে।
(৩) পক্ষগণের উত্তরাধিকারীগণ চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে। [অওজ ১৯২৭ ইড়স. ৩৮১]
(৪) চুক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন ব্যক্তিও চুক্তি রদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে।
(৫) যৌথ হিন্দু পরিবারের ম্যানেজার ও তৃতীয়পক্ষের মধ্যে চুক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তি প্রতারিত হলে ঐ ব্যক্তি চুক্তি রদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে।
গ. তামাদির মেয়াদ
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে চুক্তি রদ বা বাতিলযোগ্য-এই তথ্য জানার ১ বছরের মধ্যে চুক্তি রদ বা বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করা যায়। ১লা জুলাই, ২০০৫ তারিখের আগে তামাদি আইনের ১১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে তামাদির মেয়াদ ৩ বছর ছিল। ১লা জুলাই, ২০০৫ তারিখের আগে যদি কোন মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ ৩ বছর হবে।
ঘ. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৬ ধারা অনুসারে ভুলের জন্য লিখিত চুক্তি বাতিলের মামলা করা যায়। এখানে বলা হয়েছে, লিখিত চুক্তি ভুলের জন্য বিচারে বাতিল করা যায়। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল, যে পক্ষের বিরুদ্ধে চুক্তি রদের রায় দেয়া হচ্ছে, সেই পক্ষকে চুক্তির পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না গেলে লিখিত চুক্তির কোন পক্ষের বিরুদ্ধে চুক্তি রদের আদেশ দেয়া যাবে না। পূর্ব অবস্থা বলতে চুক্তি না হওয়ার সময় পক্ষগণ যে অবস্থায় ছিল তা বুঝানো হয়েছে।
ঙ. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৭ ধারায় সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলায় বিকল্প হিসেবে বাতিলের প্রার্থনা চাইতে হবে। এই ধারায় বলা হয়েছে, একটি লিখিত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য মামলা দায়েরকারী বাদী বিকল্প প্রার্থনা জানাতে পারে যে, চুক্তিটি যদি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা না যায়, তাহলে তা বাতিল করা হোক। আদালত যদি চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করতে অস্বীকার করেন, তাহলে তা রদ করার এবং সেই অনুসারে ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে পারেন।
এই আইনের ৩৭ ধারা অনুসারে আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ দিতে অস্বীকার করলে এক্ষেত্রে আদালত চুক্তিটি রদ বা বাতিল করার আদেশ দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাদীকে আরজিতে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের বিকল্প হিসেবে চুক্তিটি রদ করার প্রার্থনা জানাতে হবে।
চ. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৮ ধারায়, চুক্তি রদকারী পক্ষের নিকট থেকে আদালত ন্যায়পরায়ণতার দাবি করতে পারে। এখানে বলা হয়েছে, আদালত যে পক্ষের অনুকূলে চুক্তি রদের প্রতিকার মন্জুর করবেন, সেই পক্ষের নিকট থেকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত অপরপক্ষকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিবেন। এই ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণের বিধান ইকুইটির একটি নীতির [গধীরস] উপর প্রতিষ্ঠিত। ইকুইটির নীতিটি হলো, ন্যায়পরাণতার বিচারপ্রার্থীকে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। অর্থাৎ ঐব যিড় ংববশং বয়ঁরঃু সঁংঃ ফড় বয়ঁরঃু..
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৮ ধারা ৩৬ ধারার পরিপূরক। ৩৬ ধারায় চুক্তি রদের জন্য অপরপক্ষকে চুক্তির পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ৩৮ ধারায় অপরপক্ষকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে চুক্তি রদের কথা বলা হয়েছে।
একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন। নাবালকের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল। নাবালকের নাবালকত্বের কথা জেনে কেউ যদি তার সাথে চুক্তি করে তাহলে সে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৮ ধারা অনুসারে কোন ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবে না। এক্ষেত্রে ইকুইটি তার পক্ষে থাকবে না। [৩২ চ.জ.১৯০৪]
পরিশেষে বলতে চাই, চুক্তি বাতিলের মামলা করলেই যে আদালত চুক্তি বাতিলের আদেশ দিবেন এমন নয়। আদালত তার বিবেচনামূলক ক্ষমতা (উরংপৎবঃরড়হধৎু ঢ়ড়বিৎ) প্রয়োগ করে এই আদেশ দিবেন। অর্থাৎ মোকদ্দমার কোন পক্ষ অধিকারবলে (ধং ড়ভ ৎরমযঃ) চুক্তি বাতিল চাইতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা।
চুক্তি বাতিলের মামলায় আদালত চুক্তি বাতিলের আদেশ দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২২ ধারা অনুসারে আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সুষম, যুক্তিযুক্ত এবং বিচার কার্যাবলীর মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা কোন ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হবে না। সূত্র-ল’ইয়ার্সক্লাব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category