নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাহানুর বেগমের (৭৫) স্বামী মারা গেছেন ৭ বছর আগে। স্বামী সিরাজুল ইসলাম খুলনা শহরে ৪ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। সেখানেই বসবাস করতেন জাহানুর বেগম। সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ক্রয়করা ওই ৪ শতাংশ জমি স্ত্রী জাহানুর বেগমের নামে লিখে দিয়ে যান। বয়সের কারণে নানা জটিল রোগে ভুগছেন জাহানুর বেগম। ৬ মাস ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তিনি শয্যাশায়ী। সিরাজুল ইসলাম ও জাহানুর দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে সরকারি চাকরিজীবী। আরেকজন খুলনা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মহা ধুমধামে বিয়ে দিয়েছেন জাহানুর বেগম। আনুষ্ঠিকতার কমতি ছিল না। মেয়ে জামাইয়ের অবস্থাও বেশ ভালো। জামাই ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে বড় পদে চাকরি করেন। মেঝ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ব্যবসা দাঁড় করাতে মায়ের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিয়েতেও লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে জাহানুর বেগম। দুই ছেলে-মেয়ের সাধ পূরণে কখনো কার্পণ্য করেননি তিনি। এ কারণে একটা সময় খুব আর্থিক সংকটে পড়েন জাহানুর বেগম। আর্থিক সংকটের কারণে ছোট মেয়ে সাহিদা আক্তারের বিয়ে দিতে পারেননি। মেঝ ছেলে মোস্তাফিজুর ও সেজ মেয়ে সাবিনাকে একটু বেশি ভালোবাসতেন। ছোটা বেলা থেকেই তাদের নানা বায়না-আবদার মেটাতে পিছপা হতেন না। এ কারণে তার অন্য দুই ছেলে-মেয়ে অভিমান করতেন। তখন জাহানুর বেগম বলতেন, মোস্তাফিজুর ও সাবিনা একদিন আমাদের জন্য অর্থ খরচ করবে। আমাদের আর্থিক সংকট দূর হবে। তারা ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াবে। তবে জাহানুর বেগমের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা। মোস্তাফিজুর ও সাবিনার আর্থিক অবস্থা ছিল অন্যান্যের চেয়ে ভালো। পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা জাহানুর বেগম অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ভেবেছিলেন খুলনায় থাকা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাবেন। সেখানেও বাধা দেন মোস্তাফিজুর ও সাবিনা। বড় ছেলে এর মধ্যে তার চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ফেলেছেন। তার আর সামর্থ্য নেই। অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দিনদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে ভাবেন জাহানুর বেগম। তবে আদালতে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতাও নেই তার। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। এ অবস্থায় মো. ফজলুল হক বিশ্বাস নামে এক আইনজীবীর মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে ছেলে মোস্তাফিজুর ও মেয়ে সাবিনাকে অভিযুক্ত করা হয়। এসময় বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ আইনজীবীর কাছে জানতে চান নালিশি আবেদনকারী কেন আদালতে উপস্থিত হননি। তিনি বাড়িতে শয্যাশায়ী এবং আদালতে আসার মতো সক্ষমতা নেই- তা আদালতকে জানান আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস। এরপর বিচারক জাহানুর বেগমের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিকেলে বিচারক বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর বৈদ্যপাড়া সড়কে জাহানুর বেগমের বাসায় গিয়ে জবানবন্দি নেন। তার করুণ কাহিনি শোনেন। এরপর বিচারক নালিশি আবেদনটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। আগামী ১ নভেম্বর তাদের স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জাহানারা বেগম বর্তমানে বৈদ্যপাড়া সড়কে ছোট মেয়ে সাহিদা আক্তারের বাসায় অবস্থান করছেন। সাজ্জাদ পারভেজ জানান, জাহানুর বেগম নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এতদিন বড় ছেলে মায়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করে আসছিলেন। তবে তিনিও এখন আর্থিক সংকটে রয়েছেন। তার ধার-দেনা হয়েছে। এ কারণে জাহানুর বেগম তার নামে থাকা খুলনার বাড়িটি বিক্রি করতে উদ্যোগ নেন। তবে ওই বাড়ি দখল নিয়ে রেখেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমান স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানেই থাকেন। গত ২২ অক্টোবর বরিশালের বাসায় এসে ক্রেতা দরদামও করে যান। কিন্তু তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। তারা মায়ের চিকিৎসা খরচ ও ভরণপোষণ দিতেও অস্বীকার করেন। বিচারক বৃদ্ধা জাহানুর বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা মোতাবেক সন্তান মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে সমন জারি করেছেন। সাবিনা আক্তার বর্তমানে বরিশাল নগরীন ধোপাবাড়ির মোড় এলাকা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। মোস্তাফিজুর থাকেন খুলনায়। তাদের অন্য দুই ভাই-বোন বরিশাল নগরীতে বাসা ভাড়া করে থাকছেন।
ঢাকা
১২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষঃ
জবানবন্দি নিতে শয্যাশায়ী বৃদ্ধার বাড়িতে নিজেই গেলেন বিচারক
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০১:০৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১
- ৪১৫ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ