নিজস্ব প্রতিবেদক :
গাড়িতে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। মূলত জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতেই গাড়ির মালিকরা খরচ বাঁচাতে এলপিজিতে ঝুঁকছে। গত আগস্টে জ্বালানি তেল ডিজেল, অকটেন ও পেট্রলের দাম ৫০ শতাংশের মতো বাড়ানো হয়। আর তাতেই বেড়ে যায় বিভিন্ন যানবাহনের পরিচালন ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে অকটেন ও পেট্রলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) উপযোগী হিসেবে রূপান্তরের হার বেড়েছে। বর্তমানে সিএনজিচালিত গাড়িতেও অনেকে দ্বৈতচালিত জ¦ালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের সুবিধা রাখছে। অটোমোবাইল খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে গাড়িতে ব্যবহারের জন্য অটোগ্যাস হিসেবে এলপিজি জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে এলপিজিতে কনভারশনের হার আগের চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়েছে। খরচ বাঁচাতেই অকটেন ও পেট্রলচালিত গাড়ির মালিকরা এলপিজিকে সাশ্রয়ী জ¦ালানি হিসেবে বেছে নিচ্ছে। তাছাড়া এলপিজিতে গাড়ি কনভারশনে বেশ সুবিধাও পাওয়া যায়। এলপিজি তরল সিএনজির চেয়ে ওজন কম হওয়ায় গাড়ির সাসপেনশন ভালো হয়। তাছাড়া সিএনজিচালিত গাড়ি ২০০-৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা হলেও এলপিজিচালিত গাড়ি তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। পাশাপাশি সিএনজিচালিত গাড়ির জ¦ালানি খরচ কম হলেও তুলনামূলক এলপিজিতে সুবিধা বেশি। সিএনজিচালিত গাড়িতে সিস্টেম লস ২৫ শতাংশ আর এলপিজিচালিত গাড়িতে তা মাত্র ৫ শতাংশ। আবার সিএনজিচালিত একটি প্রাইভেট কারে ৫০০-৬০০ টাকার বেশি গ্যাস নেয়া যায় না। ফলে প্রতিদিনই জ¦ালানি নেয়ার মতো ঝামেলা থেকে যায়। কিন্তু এলপিজি সিলিন্ডারে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো গ্যাস নেয়া যায়। ওসব কারণেই দিন দিন দেশে গাড়িতে এলপিজির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই সুযোগে অপারেটরাও বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে চুক্তি করে এলপিজি সুবিধা চালু করেছে।
সূত্র জানায়, অকটেনচালিত ১৫০০ সিসির একটি গাড়ি এক লিটারে ১০-১২ কিলোমিটার চলে। বর্তমানে লিটারপ্রতি অকটেনের দাম ১৩০ টাকা আর পেট্রলের মূল্য ১২৫ টাকা। অথচ প্রতি লিটার এলপিজির দাম ৬০ টাকা ৪১ পয়সা। যা অকটেনের চেয়ে দ্বিগুণেরও কম আবার জ¦ালানি তেলের চেয়ে এর মাইলেজও বেশি। ওসব বিবেচনায় নিয়েই মালিকরা পেট্রলচালিত গাড়িকেও জ¦ালানিসাশ্রয়ী করতে এলপিজিতে ঝুঁকছে। বর্তমানে প্রাইভেট কার ও থ্রি হুইলার মিলিয়ে দেশে অন্তত দেড় লাখ গাড়ি অটোগ্যাসে কনভার্ট হয়েছে। আর দেশে বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে ৪২৫টি অটোগ্যাস স্টেশন চালু রয়েছে। আর আরো অন্তত ৪৫০টি স্টেশন অপারেশনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে অটোমোবাইল প্রকৌশলীদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ির ইঞ্জিনকে এলপিজি বা সিএনজিতে রূপান্তরের জন্য গাড়ি ও ইঞ্জিনভেদে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর মাইক্রোবাসসহ অন্য গাড়িতে ওই খরচ ৯০ হাজারেরও বেশি। ওই হিসেবে যেসব গাড়ির মাইলেজ কম, অর্থাৎ যারা খুবই স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করে তাদের জন্য এত টাকা দিয়ে গাড়ি এলপিজিতে চালানোর সেবা নিলেও জ¦ালানি খরচ খুব একটা সাশ্রয় নাও হতে পারে।
অন্যদিকে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব পাবলিক রিলেশন প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল জানান, গত আগস্টের পর থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি বিশেষত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, হাইস গাড়ি ব্যাপকভাবে এলপিজিতে কনভার্সন হচ্ছে। খরচ, মাইলেজ ও গাড়ির স্থায়িত্ব বিবেচনায় অনেকে ওই জ¦ালানিতে আগ্রহী হচ্ছে। নতুন যেসব গাড়ি নামছে সেগুলোর মধ্যে ২০-২৫ ভাগই এলপিজিতে কনভার্সন হচ্ছে।