নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলায় নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, আমরা পারিপার্শ্বিকতা, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আগে গ্রেপ্তারদের তথ্য বিশ্লেষণ করে যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করেছি। আমি মনে করি, অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। টিপু-প্রীতি হত্যা মামলায় গত দুদিনে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আলোচিত এ হত্যাকা-ে গ্রেপ্তার এই ছয়জনের কার কী ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল, এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর ঘটনা। জড়িতদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। গত রোববার রাতে গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ পেয়েছি। এরই ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের রিমান্ড আবেদনের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। টিপু-প্রীতি হত্যাকা-ের শুরু থেকে মোল্লা শামীমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত না তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। তবে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড ও কিলার সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার বিষয় জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
সোহেল-মারুফ ২ দিনের রিমান্ডে: গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার সোহেল শাহরিয়ার ও মারুফ রেজা সাগরের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন শহিদুল ইসলাম তাদের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাকিবের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে: এদিকে টিপু ও প্রীতি খুনের ঘটনায় আসামি রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিবকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় যানজটে আটকে পড়া গাড়িতে থাকা জাহিদুল ইসলামকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়া হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জাহিদুল। সেখানে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে ৫ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তি দেন মাসুম মোহাম্মদ। মাসুমের স্বীকারোক্তির তথ্য বলছে, এ হত্যাকা-ের কারণ ছয় বছর আগে মতিঝিলে খুন হওয়া যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবুর পরিবারকে আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন জাহিদুল ইসলাম। ওই খুনের মামলার আসামি সুমন শিকদার মুসা। এ ছাড়া মতিঝিলে ঠিকাদারি ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন মুসা। এসবের বাধা হয়ে দাঁড়ান জাহিদুল ইসলাম। মাসুম মোহাম্মদ আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, এক যুগের বেশি সময় আগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ঝামেলা থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু মাসুম মোল্লা শামীম। শামীমের মোবাইলফোন দিয়ে দুদফা মুসার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। শামীম তাঁকে জানান, জাহিদুলকে খুনের পরিকল্পনা হয় মতিঝিলের রূপালী ক্লাবে। এ পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিলেন মুসা, মানিক, দামাল, শামীমসহ আরও চার থেকে পাঁচজন। মুসার নির্দেশনায় শামীম জাহিদুল হত্যা মিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সংগ্রহের ব্যাপারে মাসুম মোহাম্মদ দাবি করেন, জাহিদুলকে খুন করার আগের দিন সন্ধ্যায় শামীমকে সঙ্গে নিয়ে কমলাপুরের আইসিডির কাছে যান। সেখানে ৩০ বছর বয়সী কালো রঙের এক যুবকের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। ওই যুবকের কাছ থেকে শামীম মোটরসাইকেল ও একটি ব্যাগ বুঝে নেন। পরে শামীম মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেন। তিনি বসেন পেছনে। পরে তাঁরা চলে আসেন মতিঝিলের এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের সামনে। তবে শামীমের মোবাইলফোনে একটা খুদে বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিল, জাহিদুলকে এখানে পাওয়া যাবে না। পরে আবার দুজন মিলে গোড়ান ছাপরা মসজিদের কাছে যান। যে যুবকের কাছ থেকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল নিয়েছিলেন, তাঁকে সেখানে দেখতে পান। পরে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দিয়ে সেদিনের মতো যে যার বাসায় চলে যান। আবার পরদিন ২৪ মার্চ দুজন কমলাপুরে ওই যুবকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের সামনে আসেন।