নিজস্ব প্রতিবেদক :
তীব্র ডলার সঙ্কটেও বেড়েই চলেছে বাংলাদেশীদের বিদেশ যাত্রা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে দেশী-বিদেশী প্রায় ৩০টি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আর ওসব ফ্লাইটের কোনোটিতেই আসন ফাঁকা থাকছে না। টিকিটের দাম প্রায় দ্বিগুণ হলেও বাংলাদেশীদের বিদেশ যাত্রা কমছে না। বরং অভিজাত তিন এয়ারলাইনস বাংলাদেশী ধনীদের জন্য সম্প্রতি উচ্চমূল্যের প্রথম শ্রেণীর আসন চালু করেছে। তার মধ্যে দুবাইভিত্তিক এমিরেটস দিনে দুটি ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীর সেবা দিচ্ছে। আর কুয়েত এয়ারলাইনস প্রতিদিন একটি ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীর সেবা দিচ্ছে। কাতার এয়ারওয়েজ সম্প্রতি বাংলাদেশীদের জন্য প্রথম শ্রেণীর চেয়েও বিলাসবহুল কিউ সুইট সেবা চালু করেছে। অভিজাত ওই কিউ সুইটেও কোনো আসন ফাঁকা থাকছে না। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পর্যটন বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ থেকে একটি বড় অংশ যাচ্ছে বিদেশ যাচ্ছে। আগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশী পর্যটকদের বৃহদংশের কাছে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল। কিন্তুএখন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিদেশগামী বাংলাদেশীদের উল্লেখযোগ্য অংশ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। তারা সঙ্গে নিচ্ছে ডলারসহ বিদেশী বিভিন্ন মুদ্রা। যার চাপ দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ-আমেরিকাগামী ভ্রমণ ভিসার আবেদনের চাপ আগের চেয়ে অনেক বেশি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ বিদেশগামী যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। গত বছর দেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে গেছে। এখন ওসব দেশে ট্যুরিস্ট ভিসার চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ ভিসার আবেদন করলে দূতাবাসগুলো অন্তত ৬ মাস পর সাক্ষাৎসূচি দিচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে বাংলাদেশীদের প্রধান শ্রমবাজারগুলোতেও নতুন করে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজারও সৃষ্টি হচ্ছে। ওসব কারণে এয়ারলাইনসগুলোয় যাত্রীর চাপ বেড়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যাত্রীর বাড়তি চাপের কারণে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বনামধন্য এয়ারলাইনসগুলো নিজেদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করেছে। এমনকি বাংলাদেশী ধনীদের চাহিদার কারণে অভিজাত বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো বিজনেস ক্লাসের আসন সংখ্যাও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি চালু করছে বিলাসবহুল প্রথম শ্রেণীও। আগামী ২১ অক্টোবর এমিরেটস এয়ারওয়েজের ইকোনমি ক্লাসে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যেতে ভাড়া লাগবে সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা। একই ট্রিপে বিজনেস ক্লাসে যেতে হলে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ফার্স্ট ক্লাস বা শ্রথম শ্রেণীতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ভাড়া লাগবে কমপক্ষে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামীদের একটি অংশই সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগই নগদ ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে। আর ওভাবে প্রতিদিন দেশ থেকে কী পরিমাণ ডলার চলে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অথচ কোনোভাবেই কমছে না দেশের খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের চাহিদা। ব্যাংক খাতে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় মূল্য ১০৮ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ১১৫ টাকার বেশি। দরের ওই তারতম্যের কারণে অবৈধ হুন্ডির বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আর প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের একটি অংশ হুন্ডিতে চলে যাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে।
এদিকে ডলার সঙ্কটেও বাংলাদেশীদের বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দেশের ব্যাংকিং খাতের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, এয়ারলাইনসগুলোর বিজনেস ক্লাস বা শ্রথম শ্রেণীতে যারা ভ্রমণ করছে তাদের অনেকেরই বিদেশে সম্পদ জমা করা আছে। ওই কারণে দেশ থেকে তাদের নগদ ডলার নিতে হচ্ছে না। বরং বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বড় অংকের অর্থ একসঙ্গে তারা পাচার করে দিচ্ছে। আর বিদেশে গিয়ে তারা লাগামহীন ব্যয়ও করছে।