নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে আলোচিত নারী পর্যটক স্বামী সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন জানা গেলেও আসলে তিনি গত ৩ মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আবার ধর্ষণকারীরাও তার পূর্ব পরিচিত এবং ৯৯৯ এ কল দেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয় বলে দাবী ট্যুরিস্ট পুলিশের। গত শুক্রবার দুপুর থেকে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা ওই নারী কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার ৮ মাস বয়সী অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসায় অর্থ জোগাড় করতে এখানে এসেছিলেন। স্বামীসহ ৩ মাস ধরে বিভিন্ন হোটেলে ছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে আদালতে ১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তার ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা জোগাড় করতে তিনি কক্সবাজার এসেছেন। গত ৩ মাস ধরে শহরের অন্তত ৭টি হোটেলে অবস্থান করেছেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন, সন্ত্রাসী আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে সোমবার সকালে কলাতলী এলাকায় একটি গেস্ট হাউসে। আশিক তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর আগে ওই নারী তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউস এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় আশিক। ওই নারী জবানবন্দিতে জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে উঠেন আশিক। তবে সেখানে তাকে ধর্ষণ করার সুযোগ পাননি আশিক। তার আগেই একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে চলে যান। ওই নারী জানান, তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে স্বামীকে দেখতে পান র?্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র?্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইন এ আসে। বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, আগের দিন বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নেওয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। পরে র?্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে। কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ছাড়াও ভিকটিম এবং মামলার বাদীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি ওই নারী ও তার স্বামী গত ৩ মাস ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন। ওই নারী এবং তার স্বামী কোনোভাবেই পর্যটক নন। তিনি বলেন, ওই নারী এবং তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক গরমিল রয়েছে, একেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করেন তিনি। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নারী ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মামলায় বাদীর অভিযোগ, আদালতের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও মেডিক্যাল রিপোর্টসহ সবকিছু ধাপে ধাপে পাওয়ার পর ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে। সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই নারীকে একটি হোটেলে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্বামী। বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা করা হয়। এতে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ৪ জনকে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি আরো ২/৩ জন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন মো. আশিকুল ইসলাম আশিক, মেহেদি হাসান বাবু, মো. ইসরাফিল হুদা জয় ও হোটেল ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। এসপি মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে র্যাব-১৫ জানায়, এ ঘটনায় ‘জিয়া গেস্ট ইন’ হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। তিনি অপরাধীদের সহযোগী।