নিজস্ব প্রতিবেদক :
নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ রোববার সকাল ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সকাল ৯টায় পাঁচ সেন্টিমিটার কমে যায়। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল তা বেড়ে সকাল ৬টায় ১২ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ পাঠক ও পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম জানান, আজ (রোববার) হঠাৎ আবারও পানি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এতে ডিমলা উপজেলার দশটি ইউনিয়নের প্রায় আট হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, হঠাৎ করে আবারও পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীবেষ্টিত কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চর এলাকার মানুষ হাঁটুপানিতে চলাচল করছে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকট। উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তারা শুকনো খাবার খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। গত চার দিন ধরে সবাই বিপদে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা প্রিন্স জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার) ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বড় ধরনের কোথাও সমস্যা তৈরি হলে তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করা হবে। বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট (স্লুইসগেট) খুলে রাখা হয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সজাগ রয়েছেন। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তাবেষ্টিত এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৫০ পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে শুকনা খাবারসহ ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে আরও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হবে।
এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জের দুটি পয়েন্টেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার শঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে নদীপাড়ের মানুষের। গতকাল রোববার সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, কাজিপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় (১৮ জুন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ১৮ জুন সন্ধ্যা ৬টায় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ মিটার। এখানে পানির বিপৎসীমার স্তর ধরা হয় ১৫ দশমিক ২৫ মিটার। ফলে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে ফসল নষ্ট হচ্ছে। পাউবোর পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সকালে শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ মিটার। এর আগে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৪১ মিটার। এখানে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৩৫ মিটার। ফলে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, যেহেতু তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, ফলে যমুনায় আরও কয়েক দিন পানি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা হতে পারে। গত প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিরাজগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুটি পয়েন্টেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভাঙনসহ যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত আছে।