নিজস্ব প্রতিবেদক :
তীব্র বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা এক বিষাক্ত নগরে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকা টানা ৪দিন শীর্ষে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আর বিগত কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বায়ুমান পৃথিবীর দূষিত জায়গার মধ্যে অন্যতম। তাা নিয়ে জাতীয়ভাবে তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বায়ুদূষণে মানুষসহ সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে শ্বাস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বায়ুদূষণে ঠা-া, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি রোগ বেড়ে যায়। তাছাড়া যাদের যাদের এ্যাজমা বা এ্যালার্জি রয়েছে তাও বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মাও বাড়ে। সর্বোপরি দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে মানুষের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বায়ুর মান সূচক শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ভাল বা স্বাস্থ্যবান্ধব বলে গণ্য হয়। তার বেশি হলেই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে শুরু করে। ওই হিসেবে ঢাকাবাসী ভয়াবহ রেড এলার্টের মধ্যে রয়েছে। আর বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে দেশে শ্বাসতন্ত্রের রোগীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। পাশাপাশি উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বায়ু থেকে দূষণের শুরুটা হলেও তা জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি। সম্প্রতি স্টাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে ২ হাজার টন ধুলাবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এদিকে রাজধানীর বায়ুমান খারাপ হওয়অ বিষয়ে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, শুষ্ক আবহাওয়ায় সহজেই ধূলিকণা সহজে উড়তে পারে। আর বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থাও এদেশে নেই। ওসব কারণে দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন মাটি থেকে প্রায় ২ হাজার টন ধুলাবালি আকাশে ওড়ে। আর তার সবই উড়ে চলে যায় না, কোথাও কোথাও সেগুলো থেকে যায়। কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধুলাবালি ভারি হয়ে নিচে নেমে আসে। সেজন্যই ভরদুপুরেও ধোঁয়াশা দেখা যায়। বায়ুদূষণ বাড়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। তার একটি হচ্ছে উৎস, আরেকটি হচ্ছে কারণ। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক কিছু বিষয় (আবহাওয়া ও জলবায়ু), নগর পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং অধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব। আর উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, ইটের ভাঁটি ও শিল্প কারখানা, উন্মুক্তভাবে আবর্জনা পোড়ানো, বস্তি এলাকার বর্জ্য পোড়ানো এবং আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ।