নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশি পশু দিয়েই সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির সব প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশে চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার বেশি। দেশীয় পশুতে চাহিদা পূরণ হওয়ায় দেশের বাইরে থেকে গরু আনা বন্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। কারণ দেশে যে পরিমাণ পশু উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে। গত বছর কোরবানিতে উৎপাদিত গরুর এক-দশমাংশ বিক্রি হয়নি। তার সঙ্গে চলতি বছরের জন্য উপযুক্ত পশু মিলে খামারিদের হাতে অনেক পশু রয়েছে। ফলে দেশের খামারি এবং গৃহস্তের কাছে থাকা গবাদিপশু দিয়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে এবার পর্যাপ্ত গবাদিপশুর মজুত রয়েছে। চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার পশুর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি। গরু-মহিষের ওই সংখ্যার মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশু রয়েছে ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৩টি আর গৃহপালিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯০টি। ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭, যার মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪০টি আর গৃহপালিত গবাদি ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৭টি। তাছাড়া উট, দুম্বা ও অন্যান্য পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯টি। এ বছর খামারিদের কাছ থেকে হৃষ্টপুষ্ট পশু আসবে ঢাকা থেকে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৬টি, চট্টগ্রাম থেকে ১৫ লাখ ১২ হাজার ১১৪, রাজশাহী থেকে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০, খুলনা থেকে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫১, বরিশাল থেকে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৩, সিলেট থেকে ১ লাখ ৬৬ ৩৫৩, রংপুর থেকে ১০ লাখ ৩ হাজার ২৮১ ও ময়মনসিংহ থেকে আসবে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪৪টি। গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি গরু-মহিষ, ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৭১৫টি গবাদিপশু কোরবানি হয়। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৩টি গরু-মহিষ, ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৩৬৩টিসহ মোট ২২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ লাখ ৭১ হাজার ২৩১টি গরু-মহিষ, ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮৬টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ২০১টিসহ মোট ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩টি গরু-মহিষ, ১২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৩টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ১২৯টিসহ মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৫টি, খুলনা বিভাগে ২ লাখ ৩৯ হাজার ১৪৭টি গরু-মহিষ, ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৩টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ১১টিসহ মোট ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১টি, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬২১টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৮টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৭৯টি, সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৯ হাজার ৫৬৯টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৮টিসহ মোট ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৪১টি, রংপুর বিভাগে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২২০টি গরু-মহিষ, ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৯টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৮০ হাজার ৩২৫টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৯টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৩টিসহ মোট ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। আর এদেশের গবাদিপশুর বৃহৎ একটি অংশ পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও যশোর অঞ্চল থেকে ঢাকার ওপর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যায়। সেক্ষেত্রে পরিবহন খাতেই উল্লেখযোগ্য একটি অংশ খরচ হতো। কারণ কোরবানি পশুর ট্রাক ফেরিঘাটে আগে যেখানে তিন-চারদিন ফেরীর অপেক্ষায় থাকতো, এবার সেসব সমস্যা না থাকায় নির্বিঘেœ পশু পরিবহন হবে।
সূত্র জানায়, গত বছর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সরকার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ করে। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তর-সংস্থা, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ অন্যান্য বেসরকারি সংগঠন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গবাদিপশুর ডিজিটাল হাট পরিচালনা করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর অনলাইনে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি গবাদিপশু বিক্রয় হয়েছে যার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রয় হয়েছিল ৮৬ হাজার ৮৭৪টি, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪ হাজার ৮২৯ টাকা, যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি। এ বছরও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আর আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য ৮ বিভাগের ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি খামারের তথ্যানুযায়ী পশুর পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহাজাদা জানান, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ২১ লাখের বেশি, যা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। ধারণা করা হচ্ছে গতবারের তুলনায় এবার কোরবানি বেশি হবে। গতবার যে অবস্থা ছিল ছিল তা ওভারকাম গেছে। গত বছর অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যেও প্রায় ৯১ লাখ গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এবার হয়তো তার চেয়ে বেশিই হবে। এ বছর যেন কোরবানির পশুর অভাব না হয় ওই প্রস্তুতি রয়েছে। অনলাইনে পশু বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যারা হাটে যেতে চায় না তারা অনলাইন থেকে গবাদিপশু সংগ্রহ করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে অনলাইনে পশু কিনতে গিয়ে কেউ যেন প্রতারিত না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। কারণ গত বছর এ অভিজ্ঞতাটি সবার জন্যই নতুন ছিল।
অন্যদিকে এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুত আছে। সেজন্যই এ বছর কোরবানিতে বাইরের দেশ থেকে পশু আসবে না। দেশে যে পরিমাণ পশু উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। গত বছর কোরবানিতে উৎপাদিত গরুর এক-দশমাংশ পশু বিক্রি হয়নি। তার সঙ্গে চলতি বছরের জন্য উপযুক্ত পশু মিলে অনেক পশু খামারিদের হাতে রয়েছে। দেশের খামারি এবং গৃহস্থের কাছে থাকা গবাদিপশু দিয়ে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে। তাছাড়া চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। গত বছরের মতো খামারিদের গরু নিয়ে ফিরে যেতে হবে না। আশা করা যায় তারা উপযুক্ত দামেই গরু বিক্রি করতে পারবে। আর সীমান্ত এলাকায় আরো কঠোর হতে বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যাতে দেশে বাইরের পশু না আসে। বাইরের পশু রোগ নিয়ে এলে তা ছড়িয়ে যেতে পারে। করোনা থেকে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবার ওই প্রক্রিয়াও থাকবে, আবার হাট-বাজারেও বিক্রি হবে।