• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

দেশের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধিতে দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

Reporter Name / ৮৮ Time View
Update : শনিবার, ২৮ মে, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের অর্থনীতির কলেবার বাড়ায় দ্রুততম সময়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর তা বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে। প্রত্যাশিত বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে চীনের চায়না মার্চেন্টস স্পোর্টস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড, সিঙ্গাপুরভিত্তিক পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস, দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ এবং ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন রয়েছে। টার্মিনালটি নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন বিধায় দীর্ঘসূত্রতায় না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। টার্গেট অনুযায়ী আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এর একাংশের কাজ সম্পন্ন করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে আমদানি-রফতানি যেভাবে বাড়ছে তাতে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বার্ষিক অন্তত ১০ মিলিয়ন কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অন্তত ৫ মিলিয়ন কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার টার্গেট। ওই লক্ষ্য নিয়েই বিদ্যমান বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে বে-টার্মিনাল। সাগরপাড়ের সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওই টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। বিশ^ব্যাংক টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিয়ন্ত্রক) নির্মাণে সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। বে-টার্মিনালে থাকবে মোট ৩টি টার্মিনাল, যার মধ্যে একটি নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটির কাজ কোন বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। কিন্তু দেশে শিল্পায়ন এবং আমদানি-রফতানি যেভাবে বাড়ছে তাতে বিদ্যমান বন্দর সুবিধা দিয়ে আর বেশিদিন চলবে না। ২০২৫ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে তিনটির মধ্যে যে টার্মিনালটি বন্দর নির্মাণ করবে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে জাহাজ ভেড়াবার টার্গেট রয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাশমনির ঘাট পর্যন্ত সাগরপাড়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২ হাজার ৩শ’ একর এলাকাজুড়ে হবে বে-টার্মিনাল। যেহেতু দেশের অর্থনীতির কলেবর বাড়ার কারণে চাহিদা বাড়ছে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অবকাশ নেই। আর বে-টার্মিনালের তিনটি টার্মিনালই সমান আয়তনের হবে। তার মধ্যে দক্ষিণ পাশের টার্মিনালটি আগে নির্মিত হবে, যা বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর। প্রতিটি টার্মিনালে ৪টি করে জেটি হবে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে টার্মিনালের জন্য ৬৮ একর জায়গা পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপর পর্যায়ক্রমে মিলছে বাকি ভূমি। মোট ৯০৭ একর ভূমিতে হচ্ছে বে-টার্মিনাল। তার মধ্যে ৬৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, বাকি ৮৩৯ একর সরকারী। এখন যে পর্যায়ে তাতে আর প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই।
সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘসূত্রতা অনেক থাকলেও অবশেষে বে-টার্মিনাল নির্মাণ এখন বাস্তবতা। ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলো এরইমধ্যে সম্পন্ন করে আনা হয়েছে। আগামী ৩১ মে দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এ- কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েন ইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি স্বাক্ষরের পর টার্মিনালের ডিজাইন প্রস্তুত কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে। তাতে ব্যয় হতে যাচ্ছে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওই কার্যক্রমে ৮ থেকে ৯ মাস সময় নেবে। তার আগে গত ৭ এপ্রিল সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। বিভিন্ন দেশের ৫টি প্রতিষ্ঠান পরামর্শক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। শেষ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করে যৌথভাবে এই দুই কোরীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থনীতির আকার যেভাবে বাড়ছে তাতে বিদ্যমান বন্দর সুবিধায় সেবা প্রদান ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল। ওই কারণে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের আগেই বে-টার্মিনাল নির্মাণের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। তবে এখন গভীর সমুদ্র বন্দর এবং বে-টার্মিনাল দুটির কাজই এগিয়ে চলেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর আগামী ৩১ মে হলেও মাটি ভরাটসহ প্রাথমিক কিছু কাজ আগে থেকেই এগিয়ে নেয়ার কাজ চলমান রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর এখন যে পরিমাণ কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে বে-টার্মিনাল একাই তার দ্বিগুণ হ্যান্ডলিং করতে পারবে। ফলে কাজ শেষ করে অপারেশনে যাবার পর বন্দরের সক্ষমতা ৩ গুণ হয়ে যাবে। বর্তমান চ্যানেল দিয়ে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারে। আর ওই সাইজের জাহাজ ১৮০০ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে। বে-টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ, যা ৫০০০ টিইইউএস কন্টেনার পর্যন্ত বহন করতে সক্ষম হবে। বিদ্যমান বন্দর সম্পূর্ণ জোয়ার-ভাটা নির্ভর। জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জোয়ার এবং ছাড়ার জন্য ভাটার অপেক্ষায় থাকতে হয়। সমুদ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত বর্তমান জেটিগুলো। এটুকু আসতে বেশকিছু বাঁকও রয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি যেমন থাকে, তেমনিভাবে দূরত্বের কারণে সময়ও বেশি লাগে। বিদ্যমান জেটিগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা জাহাজ আসা-যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু বে-টার্মিনাল সাগরপাড়ে হবে বিধায় সেখানে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা জাহাজ আসা-যাওয়া করতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান ফ্যাসিলিটিতে একসঙ্গে ১৯টি জাহাজ ভিড়তে পারে। বে-টার্মিনালে ভিড়তে পারবে অন্তত ৩৫ জাহাজ। পরে ওই সুযোগ আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। সাগর থেকে শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই হতে যাচ্ছে টার্মিনালের অবস্থান। বে-টার্মিনাল হলে শুধু সেখানেই বিদ্যমান বন্দরের দ্বিগুণ পণ্য হ্যান্ডলিং করা যাবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি পাওয়া যাবে সেটি হলো বন্দরে নামা পণ্যের সহজ পরিবহন। সেখান থেকে অতি সহজে মহাসড়ক ধরে আমদানির পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারবে। রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণও সহজ হবে। নগরীর বাইরে হওয়ায় বন্দরের ট্রান্সপোর্টগুলো শহরের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না।
অন্যদিকে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের মতে, বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের অর্থনীতির চাহিদা। এটি আরো আগেই করা প্রয়োজন ছিল। তবে বিলম্ব হলেও কাজ মাঠে গড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের ২০২১ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করার দাবি ছিল। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্গেট ২০২৪ সালের মধ্যে। এটি যেন আবারো দীর্ঘসূত্রতায় না গড়ায় সেদিক লক্ষ্য রাখা জরুরি। দেশের রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য, তা পূরণ করতে হলে বন্দর সুবিধা অবশ্যই বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) অর্জনের যে লক্ষ্য, তার জন্যও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category