নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ শিক্ষার নামে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে দেশের বিপুলসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ওসব প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই অনিয়ম থেকে বের হয়ে আসছে না। দেশে অনুমোদন পাওয়া ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ৫০টির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইতিমধ্যে অন্তত ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তার মধ্যে সঠিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি ২০১৫ সালে ১০টি প্রোগ্রামের অনুমোদন পাওয়ার আগেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ফরিদপুর জেলা প্রশাসন থেকে আসা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলা চলছে। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সবগুলোতেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সিটিং এলাউন্স গ্রহণ, জমি ও গাড়ি কেনায় অনিয়ম, বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষার্থী ভর্তিতে অবৈধ কোটা নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে। ইউজিসির একটি কমিটি বিষয়গুলোর তদন্ত করছে। চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) বিরুদ্ধে ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব, জমি কেনায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচার, ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে বিরোধ, শিক্ষকদের ভুয়া পিএইচডি গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও ইউজিসির একটি কমিটি তদন্ত করছে। তাছাড়া রাজধানীর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৭৫টি আসন থাকলেও অবৈধভাবে ৯০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। আর এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে চরম বিরোধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ ব্যয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম। ওসব কারণে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কোন ঠিকানাও নেই। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও সনদ বিক্রির অভিযোগে তদন্ত চলছে। আর সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ইতিমধ্যে তদন্ত করে নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, সিলেটের নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, খুলনায় অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটি, মিরপুরে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও ইবাইস ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। আর আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস করেছে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি। কিন্তু সেখানে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। ওই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী সনদের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে ইউজিসি।
এদিকে এসব বিষয়ে ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুখ জানান, বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো তদন্ত করে আইনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।