নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাটবাজারগুলোতে এখন নতুন আমন ধানের ব্যাপক সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বেড়েই চলেছে চালের দাম। আমনের ভরা মৌসুমেও রাজধানীর খুচরা বাজারে একদিনেই মানভেদে প্রতি কেজি চাল ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অজুহাত, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। আগে মোকাম থেকে চাল আনতে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা, এখন তা ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। ওই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া ধানের দামও বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার ধানের মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। ফলে চালের দামের ওপর তার প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনার মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আবার করোনার চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে। সেজন্য একটি চক্র আগেভাগেই ব্যাপকভাবে ধান-চাল মজুদ করছে। আর তার প্রভাবেই চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং চাল বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছর দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। আশা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে প্রতিদিনই দেশের হাটবাজারগুলোতে ধান-চালের সরবরাহ বাড়ছে। তবে দামও বেশি। হাটবাজারগুলোতে এখন প্রতি মণ কাঁচাভেজা কাটারিভোগ ধান ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা, কাটারিভোগ শুকানো ধান ১ হাজার ৩৬০ থেকে ১ হাজার ৩৭০ টাকা , ব্রিধান-৪৯ শুকনা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৭০ টাকা, ব্রিধান- ৫১ শুকনা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকা ও স্বর্ণা-৫ শুকনা ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
সূত্র জানায়, একদিকে ধানের দাম বেশি, অপরদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি বড় জোতদার ও বড় ব্যবসায়ীরা আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান-চাল মজুত করছে। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ গত কিছুদিন ধরেই চালের দর বাড়তি। চলতি বছর আগস্টে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পাশাপাশি গত অক্টোবর পর্যন্ত পণ্যটি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও বাজারে চালের দাম কমেনি।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। তার মধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোন সংকট নেই।
এদিকে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে সরকারের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তায় এই মজুদ বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট। আর কেউ যেন অবৈধ মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কোন কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।