• শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
গুইমারায় ট্রাক ও মিনিট্রাক চালক সমবায় সমিতি’র শুভ উদ্বোধন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হামাস বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত পুলিশসহ সব সরকারি কর্মকর্তাকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা বিদ্বেষপূর্ণ খালেদা জিয়া-তারেকসহ সব আসামি খালাস পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার কাজ চলছে: আইজিপি পদত্যাগ করলেন টিউলিপ প্রধান উপদেষ্টার কাছে চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচারের আশা আইন উপদেষ্টার বিপুলসংখ্যক গাড়ির ইঞ্জিন ভেজাল জ্বালানি তেলে নষ্ট হলেও পর্যাপ্ত নজরদারি নেই বছরের পর বছর নিলামের অপেক্ষায় কয়েক হাজার পণ্যভর্তি কনটেইনার

দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী

Reporter Name / ১০১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আর একজন লোক ও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তাঁর অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে বলেছেন, ক্ষমতার মানেই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন এবং ঠিকানাবিহীন থাকবে না। আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলার ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি বিতরণকালে সুবিধাভোগিদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার লালিত স্বপ্ন পূরণে সবার মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩২ হাজার ৪শ’ ৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমি ও ঘর দিয়েছি। আমি আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের উপহার হিসেবে আজ এসব জমি ও ঘর দিয়েছি। যারা ঘর পেয়েছে তাদের মুখের হাসি আমি খুব পছন্দ করি। সরকার প্রধান বলেন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ঠ রোগি, ভিন্নভাবে সক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। আর এজন্য সরকার শুধু খাস জমিরই খোঁজ করছে না, নিজেদের অর্থায়নে জমি কিনেও ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর আর কোন দেশে এ ধরনের উদ্যোগ আর কেউ নিয়েছে কিনা। কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি শুধু তাঁর কন্যাই না, তাঁর আদর্শেরও অনুসারী। আর আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা করা। তাঁদের জন্য কাজ করা এবং আমি সেটাই করে যাচ্ছি। জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি জানি আজ আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে, যখন তিনি দেখবেন তাঁর জনগণের মুখে হাসি ফুটেছে। শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের পদাংক অনুসরণে ’৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৯১ সালের প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া টের পান নি। কারণ তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ’৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর বিদেশ সফর বাতিল করে জরুরী ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে মানুষকে সহযোগিতায় নেমে পড়েন এবং নিজে বিভিন্ন জায়গায় যান। তিনি বলেন, সে সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৭০টি আশ্রয়হীন পরিবারের জন্য নৌবাহিনী এবং জমি দানকারি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ভূমিহীনদের এই পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু হয়। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার এই কর্মসূচিকে আরো বেগবান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন থেকে আমরা ফান্ড করে জমি কিনেও ঘর তৈরি করছি এবং গৃহহীনদের মাঝে উন্নত মানের সেমি পাকা ঘর করে দেয়ারও পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকার প্রধান বলেন, আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যখন দেখি একটা মানুষ ঘর পাওয়ার পর তার মুখের হাসি। জাতির পিতা দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সকল মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সে লক্ষ্য নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাব। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে স্বীকৃতি পেয়েছি তাকে ধরে রেখে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। যে জাতি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে সে জাঁতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারেনা। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারেনা, বলেন তিনি। ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশকে পিছিয়ে দেয়ার এবং স্বাধীনতার চেতনা ভূলুন্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্র তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারাটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলের নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলবো জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলবে। দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একটা মানুষকে যদি একটু আশ্রয় দেওয়া যায়, তার মুখে হাসি ফোটানো যায় এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কি হতে পারে। এটাই সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সময়ই আপনারা দেখেছেন, অর্থবিত্ত সম্পদ কাজে লাগে না। সে সময় অনেক হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিকেরও কিছুই কিন্তু করার ছিলনা। যারা বাংলাদেশে কোনদিন চিকিৎসাই নেয়নি তাদেরকেও এই দেশেই ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে। সারাবিশে^ লকডাউনের কারণে টাকা থাকলেও এসব ধনীরা দেশের বাইরে যেতে পারেননি। অথচ অতীতে একটু সর্দি কাশিতেও তারা দেশে চিকিৎসা না নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি জেলার চারটি স্থানের সাথে যুক্ত হয়ে সুবিধাভোগী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়ও করেন। চারটি স্থান হলো: ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অধীনে খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প। মুজিববর্ষে সারাদেশে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে বাসস্থানের আওতায় আনার সরকারি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় তিন ধাপে এ পর্যন্ত ১৫০,২৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্র ও প্রদর্শিত হয়। অর্থ সম্পদ কারো চিরস্থায়ী নয়, স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য অর্থ সম্পদের পেছনে কেবল ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানিত করার কোন মানেই হয়না। বরং দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে, একটা মানুষের ও মুখে হাসি ফোটাতে পারলে- সেটাই হবে সব থেকে বড় পাওয়া। এজন্য দেশবাসীকে নিজ বাড়ির আশপাশের দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় অনেক উন্নত দেশ না পারলেও তৃতীয় বিশে^র একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে দেশবাসীকে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন এবং প্রয়োজনীয় করোনা চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে প্রদানে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে হয় পৃথিবীর কোন দেশ এইভাবে মানুষকে সম্পৃক্ত করে এরকম দুর্যোগকালিন পরিস্থিতিতে একযোগে কাজ করতে পারেনি, যেটা বাংলাদেশে আমরা করতে পেরেছি। যে কারণে আমরা আজকে হয়তো করোনার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাতেও এভাবেই দেশবাসীকে একযোগে কাজ করে যাবার আহবানের পাশাপাশি বিশে^র বিভিন্ন দেশে আবারো করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় সকলকে এ সময় সতর্ক থাকার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, বাংলাদেশ উন্নত হোক- যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল তারা এখনও রয়ে গেছে, যারা কখনো এটা চাইবেনা। কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করা হয়, আর দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষের দেশ কেউ বলে না, অবহেলার চোখে কেউ দেখে না। আর এটা সম্ভব হয়েছে এদেশের মানুষের জন্য। শেখ হাসিনা এ সময় বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়াতেই আজকের দৃশ্যমান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে এজন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেন। দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে কাছে দূরের সকলেই তাঁর হৃদয়ে রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে সকলের কল্যাণ কামণার পাশাপাশি জনগণকে আশ^স্ত করে তিনি বলেন, নিজেদের জীবনকে নিজেরা গড়ে তোলেন। আমরা আছি আপনাদের পাশে। জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাল্লাহ আমরা পুরণ করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category