• সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার

দেশে পৌনে ৪ কোটি শিশুর লেখাপড়া ব্যাহত

Reporter Name / ১৯৩ Time View
Update : সোমবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহামারির কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর লেখাপড়া ব্যাহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসে এবং কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে ইউনিসেফ শিশুদের পড়াশোনার ওপর মহামারিটির প্রভাব সম্পর্কে প্রাপ্ত সবশেষ উপাত্ত তুলে ধরেছে। আজ সোমবার ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে স্কুল বন্ধ ছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হলেও সরকার নতুন করে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ করতে হলে তা অবশ্যই শেষ অবলম্বন হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে করতে হবে। সংক্রমণের ঢেউ সামাল দিতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে সবার শেষে এবং খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্কুল থাকা উচিত। ইউনিসেফের শিক্ষা-বিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেন, বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিঘেœর দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী মার্চে। খুব সহজভাবে বললে, আমরা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রায় অপূরণীয় মাত্রার ক্ষতি প্রত্যক্ষ করছি। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটাতে হবে এবং শুধু স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়াই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের নিবিড় সহায়তা প্রয়োজন। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং পুষ্টি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে স্কুলগুলোকে শুধু শেখানোর নির্ধারিত গ-ির বাইরেও যেতে হবে। শিশুরা গণনা ও স্বাক্ষরতার মৌলিক দক্ষতা হারিয়েছে। বৈশ্বিকভাবে পড়াশোনায় ব্যাঘাতের অর্থ হলোÑলাখ লাখ শিশু শ্রেণিকক্ষে থাকলে যে অ্যাকাডেমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারতো তা থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বঞ্চিত হয়েছে, যেখানে ছোট ও আরও বেশি প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্কুল বন্ধের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ায় ১০ বছর বয়সীদের ৭০ শতাংশই সহজ পাঠ্য পড়া বা বোঝার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি, যা মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। ইথিওপিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা স্বাভাবিক শিক্ষাবর্ষে যে পরিমাণ গণিত শিখতে পারতো তার মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিখতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, টেনেসি, উত্তর ক্যারোলিনা, ওহাইও, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ডসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে পড়াশোনার ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসে ২০২১ সালে গ্রেড ৩-এর দুই-তৃতীয়াংশ শিশুদের তাদের গ্রেডের জন্য গণিতে দক্ষতা কম ছিল। ২০১৯ সালে এই হার ছিল অর্ধেক শিশু। ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি প্রদেশে গ্রেড ২-এর প্রতি ৪ শিশুর মধ্যে ৩ জন পড়ার দক্ষতা অর্জন থেকে বিচ্যুত, যা মহামারির আগে ছিল প্রতি ২ শিশুর মধ্যে একজন। দেশটিতে ১০-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন জানিয়েছে, তাদের স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়ার পরে তারা আর স্কুলে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় স্কুলগামী শিশুদের শিক্ষাবর্ষে যে অবস্থানে থাকার কথা তার চেয়ে তারা ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে আছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে বলে জানা গেছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় তা পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে, তাদের নিয়মিত পুষ্টি প্রাপ্তির উৎস কমিয়ে দিয়েছে এবং তাদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ক্রমেই উঠে আসা তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে যে, কোভিড-১৯ শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ হারে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়ে, কিশোর-কিশোরী এবং গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরা অধিক হারে এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন। স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে বিশ্বব্যাপী ৩৭ কোটিরও বেশি শিশু স্কুলের খাবার থেকে বঞ্চিত হয়, যা কিছু শিশুর জন্য খাবার ও দৈনিক পুষ্টি প্রাপ্তির একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস এবং তারা সেটা হারায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category