নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে জেল-জরিমানার বিধান থাকায় ভুল চিকিৎসার সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নেপাল এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুজন রাষ্ট্রদূত দেখা করেছেন। সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনা হয়েছে। রোগীর সুরক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে কাজ শুরু হয়েছে। যারা হাসপাতালে সুরক্ষা নেন তাদের সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশেও রোগীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে কাজ হচ্ছে। রোগী যেন হাসপাতালে এসে সঠিক চিকিৎসা পান। যেখানে অপারেশন প্রয়োজন নেই সেটি যাতে করা না হয়, অপারেশন হলে যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব না থাকে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন কেবিনেটে অনুমোদন পেয়েছে। আশা করি অল্প দিনেই সংসদে নিতে পারবো। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করার ক্ষেত্রে এর অংশীজনদের বক্তব্য মাথায় রাখা হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন একটি আইন করা হয়, তখন সব অংশীজনদের কথা ভাবা হয়। সব মন্ত্রণালয়, অন্যান্য সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মতামত নেওয়া হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসি। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও বাইরের দেশের আইনও বিবেচনায় রাখা হয়। আমাদের আইন অনেক আধুনিক আইন হবে। এতে সব বিষয় স্থান পাবে। তিনি বলেন, পাশাপাশি চিকিৎসায় যদি কারও ভুল হয়, কিংবা অবহেলা থাকে, শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। দোষ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও হবে, প্রতিষ্ঠানসহ যারা জড়িত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে আর্থিক থেকে শুরু করে জেলের বিষয়টিও রয়েছে। এতে সমস্যা কমে আসবে অনেকাংশে। হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক অসদাচরণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের বলেছি যে আমরা বর্তমান প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। নতুন আইন যে হচ্ছে, সেখানেও যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার আরেকটি দিক রয়েছে। যেমন রোগী যদি স্বাভাবিক কারণে মারা যান। কিন্তু আমরা বাইরে থেকে যদি মনে করি, সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এ দিকটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আবার ভুল চিকিৎসারও শাস্তি আইন অনুসারে নেওয়া হবে। হাসপাতালে দেরি করে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে বেশি ডেঙ্গুরোগী মারা গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যুর হারও বেড়েছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুরোগী বেড়েছিল। এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার ডেঙ্গুরোগী পেয়েছি। তার মধ্যে ৩৬ হাজারই ঢাকায়, তাও সিটি করপোরেশন এলাকায়। সিটি করপোরেশনেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী। সিটি করপোরেশনে লোকও বেশি বাস করে। এখানে অনেক ড্রেনেজ সিস্টেম আছে। অনেক রকমের পানি জমে আছে, সেটাও বেশি। ‘ঘরবাড়িও বেশি, যেখানে আবর্জনা ও পানি জমে থাকে, কনস্ট্রাকশন অনেক বেশি। সব জায়গায় স্প্রে করা প্রয়োজন। স্প্রে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা করে থাকে। এ বছর দেখা গেলো তারপরও মশা অনেক বেড়েছিল। এতে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা বারিধারা থাকি সেখানেও অনেক মশা। সার্বক্ষণিক স্প্রে করলেও দেখি মশা দূর হয় না। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গুর জন্য যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের নেওয়ার কথা অর্থাৎ হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা, আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থা রেখেছিলাম। হাসপাতাল ডেঙ্গুরোগীতে ভরা ছিল। প্রত্যেক দিন প্রায় ১ হাজার রোগী আমরা পেতাম। সেই ১ হাজার রোগীকে আমাদের রাখতে হয়েছে, চিকিৎসা দিতে হয়েছে। কেউই বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে যায়নি। আশার বিষয় হলো রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আগে এক হাজার রোগী প্রতিদিন আমরা পেয়েছি, আজ (গতকাল সোমবার) ৪০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। তাতে অর্ধেরকেরও বেশি কমেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। গতকাল (গত রোববার) তিনজন মারা গেছে। তার আগে কয়েকদিন কোনো মৃত্যু হয়নি। তিনি বলেন, গ্রামে কিন্তু এত মশা নেই, ঢাকা শহরে এটা বেশি। তাই ঢাকা শহর অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতে যদি বেশি নজরদারি করা হয় তাহলে হয়ত আগামীতে ডেঙ্গুর সংখ্যা কমবে। স্প্রে হয়ত যে পরিমাণ দরকার ছিল সে পরিমাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, সেজন্যই ডেঙ্গু কমে এসেছে। আশা করি সামনে ভালো ওষুধ যথা সময়ে দেওয়া হবে। জাহিদ মালেক বলেন, স্প্রে যথেষ্ট করার পরও যখন মশা এত বাড়ে তখন অনেক সময় মনে হয় এই ওষুধটা মশার জন্য কার্যকর হয়নি। মানুষের শরীরে যেভাবে অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে, মশারও তেমন অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়াও রোগীরা হাসপাতালে দেরি করে আসছে। তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে রোগী যখন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তখন অনেকে মনে করছেন সর্দি জ¦র হচ্ছে। সেটা ভেবে অনেক কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, এতে রোগী সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। হেমোরেজিক একটা ভাইরাসে আছে ডেঙ্গুর যা ইন্টারনাল ব্লেডিং করে, সেটা শুরু হলে রোগীকে বাঁচানো কষ্ট হয়ে যায়। দেরি করে আসার কারণে অনেক রোগী মারা গেছে। ভর্তি হওয়ার তিনদিনের মধ্যে রোগী মারা গেছে ৭২ শতাংশ। যারা দীর্ঘ সময় থাকতে আসত পেরেছে তারা কিন্তু বেঁচে গেছে। যারা আসার তিনদিনের মধ্যে মারা গেছেন তারা সিরিয়াস কন্ডিশনে এসেছিল। সেদিকে সবার সচেতন থাকতে হবে, যাতে জ¦র হলে পরীক্ষাটা করে নেওয়া হয়। ডেঙ্গু হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা বারিধারায়ও মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বারিধারায় থাকি, এখানেও অনেক মশা। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজের বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। গ্রামে এত মশা নেই। সেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। এটা ঢাকা শহরেই বেশি। সিটি করপোরেশন থেকে বেশি নজরদারি করলে আশা করি কমে আসবে। যদিও তারা চেষ্টা করছে, স্প্রে করছে। তবে যে পরিমাণে দেওয়ার কথা সে পরিমাণ হয়তো দেওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু দেশে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর হারও বেড়ে গিয়েছিল। আশপাশের দেশেও বেড়ে গিয়েছিল। এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার রোগী আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ঢাকার, সিটি করপোরেশনের মধ্যে। এখানে ড্রেনেজ সিস্টেম বেশি, পানিও জমে থাকে বেশি। এসব জায়গায় স্প্রে করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে সবাই চিকিৎসা পেয়েছেন বলেও দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সুইজারল্যান্ড স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান জাহিদ মালেক। নেপালের রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তার আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের অনেক নেপালি ছাত্র মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করছেন। অনেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছেন। বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার নেপালি ছাত্র লেখাপড়া করছেন। শতাধিক ছাত্র পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছেন। নেপালি রাষ্ট্রদূত একটি কথা বলেছেন, ছাত্ররা যখন বিভিন্ন হাসপাতালে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেন, সেসময় বাংলাদেশি ছাত্ররা একটি ভাতা পেয়ে থাকেন, সেই একই ভাতা নেপালি ছাত্ররাও আশা করছেন।