নিজস্ব প্রতিবেদক :
অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে আজ রোববার দেওয়া হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবারের অগ্রীম ট্রেনের টিকেট। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় টিকিট বিক্রি। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়াও ৫ জায়গা থেকে বিক্রি হচ্ছে এসব অগ্রীম টিকেট। প্রতিটি ট্রেনে একটি করে এসি কম্পার্টমেন্ট রয়েছে। আর এসব কম্পার্টমেন্টে সিট রয়েছে ৫৫টি। কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার তুলনায় অনেক কম থাকায় টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারির প্রথম কয়েক জনের কাছে টিকিট বিক্রি করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এসির টিকিট। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, টিকিট প্রত্যাশীরা অনেকেই গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে অবস্থান করছেন। কেউ রাতে, কেউ সেহেরির পর এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এত কষ্ট সহ্য করেও রাতভর স্টেশনে অপেক্ষা করে যারা টিকিট পাচ্ছেন তাদের মুখে বিজয়ের হাসি। অবশ্য যারা টিকিট পাননি তাদের মুখে ঝড়লো ক্ষোভ। তারা বললেন, ‘টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ জনকে দেওয়ার পর এসি টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এত টিকেট কোথায় গেলো, কারা নিলো?’ অনেকে টিকিট পেলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত এসি কম্পার্টমেন্টের টিকিট। এসির না পেয়ে তারা নিচ্ছেন নন-এসি শোভন চেয়ারের টিকিট।কমলাপুরে গতকাল রোববার নারী টিকিট প্রত্যাশীদের উপস্থিতি ছিলো আগের দিনের চেয়ে অনেক বেশি। নারীদের জন্য দুটি কাউন্টার থাকলেও তুলনামূলক উপস্থিতি বেশি হওয়ায় তাদের জটলা পাকিয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার সকালে অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে না পেরে রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কাউন্টারে এসে দাঁড়াচ্ছেন। অনলাইনে টিকিট কাটার ভোগান্তির কথাও জানালেন তারা। তাদের অভিযোগ, ভোগান্তির কারণে বাধ্য হয়ে তারা আবার স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে টিকিট দিতেও সময় লাগছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, কাউন্টারে টিকিট বিক্রির সফটওয়ারটিও মাঝেমধ্যে ‘হ্যাং’ করছে। তাছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কাটার বাধ্যবাধকতার কারণেও সময় বেশি লাগছে ৫ থেকে ৭ মিনিট। খাইরুল নামে অপেক্ষারত এক টিকিট প্রত্যাশী বলেন, ‘অনলাইনে টিকেট কাটার চেষ্টা করেছি কিন্তু ঢুকতেই পারিনি। আর সে কারণেই এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখা যাক টিকেট পাই কিনা।’ সায়মা নামে আরেকজন বলেন, ‘টিকিটের জন্য সেহরির পর লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। শুনছি কয়েকজনকে দেওয়ার পর এসির টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন শোভন চেয়ারের টিকিট পাবো কিনা দেখি, লাইনে অপেক্ষা করছি।’ অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকেট হাতে পেয়েছেন কবির হোসেন নামে এক যুবক। উচ্ছ্বসিত কবির বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে বাড়ি যেতে পারবো, টিকিট নিশ্চিত। এখন ট্রেন ছাড়ার সময় ঠিক থাকলেই হলো।’ কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, ট্রেনের এসি বগিতে ৫৫টা সিট থাকে। যার মধ্যে অর্ধেক কাউন্টারগুলোতে বিক্রি হয়, আর অর্ধেক অনলাইনে। প্রতিটি কাউন্টারে দুই থেকে তিন জনকে দেওয়ার পর এসি টিকিটগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া সকাল ৮টায় সার্ভার চালু হওয়ার পর সবাই সেই সময়ে ঢোকার চেষ্টা করে বলে সার্ভারে কিছুটা ধীর গতি দেখা দেয়। তবে এখন যাত্রীরা টিকেট কাটতে পারছে। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর পাঁচটি জায়গা থেকে ৭৭টি কাউন্টার এর মাধ্যমে দেওয়া শুরু হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল গ্রামীণ আন্তঃনগর এবং খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকেট। ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী গ্রামীণ সকল আন্তনগর ট্রেন, তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহ জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল সহ আন্তনগর ট্রেন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মোহনগঞ্জগামী আন্তনগর মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট। এছাড়াও ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেল স্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট। গতকাল রোববার দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবারের এর টিকেট। আজ সোমবার দেওয়া হবে আগামী শুক্রবার এর টিকিট। এরপর আগামীকাল মঙ্গলবার দেওয়া হবে আগামী শনিবারের টিকেট এবং সব শেষ আগামী বুধবার দেওয়া হবে আগামী রোববার-এর টিকিট।