নিজস্ব প্রতিবেদক :
নয় মাসে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সদিচ্ছা থাকলে নয় মাসের কম সময়ে খাদ্য নিরাপদ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আজ বুধবার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সব স্তরে আমাদের সচেতনতা ও ইচ্ছের ঘাটতি রয়ে গেছে। উৎপাদনকারী-প্রস্তুতকারীরা বাড়তি মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছেন। সরকার খাদ্য নিরাপদ করতে যেসব আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতার প্রচার-প্রচারণা করছে সেগুলো তারা কানে নিচ্ছে, কিন্তু মনে নিচ্ছে না। খাদ্য প্রস্তুতকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ব্যবসা করছেন, লাভ করুন। কিন্তু সেটা সততার সঙ্গে পরিমিত করুন। ভেজাল দিয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন না। তাতে দুনিয়াতে নিজেদের ক্ষতি হবে, পাপও হবে। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা বলি কৃষক কীটনাশক দেয়। কিন্তু সেটা যখন খাবার টেবিল পর্যন্ত আসে, সেটা কতটা অনিরাপদ থাকে। এরচেয়ে বেশি খাবারকে অনিরাপদ করা হয় প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন পর্যায়ে। এমনকি পরিবারের মানুষ সেটা কেনার পরও অনেক সময় মুখে ওঠা পর্যন্ত সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ করে ফেলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের সচেতনতা-সদিচ্ছা না থাকলে শত চেষ্টায়ও খাদ্য নিরাপদ করা যাবে না। এটি দুই-তিনটি মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। কঠোর আইন করে, বা এর কঠোর প্রয়োগ করেও সম্ভব নয়। প্রত্যেকের বিবেককে জাগাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা যেটা উৎপাদন করেন, সেটা কি খান? নিজে খাবার উৎপাদন করে, মানুষকে খারাপ খাইয়ে নিজের বাচ্চাদের বিদেশ থেকে এনে খাওয়াবেন, সেটা হবে না। আপনি যা বানান সেটা খাবেন। মানবিক বিষয়টি চিন্তা করবেন। আপনি না খেলেও সেটা হয়তো আপনারই কোনো ভাই বা পরিবারের কেউ খাচ্ছে। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন খুব বড় চ্যালেঞ্জ। খাদ্য প্রাপ্তির এখন কোনো সমস্যা নেই। স্বাধীনতার পর দেশে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করেছে সরকার। খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, মাছ, মাংস ও দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন উদ্বৃত্ত দেশের পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে এই পণ্যগুলোকে বহুমুখীকরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভোক্তার কাছে মান সম্পন্ন মাছ, মাংস ও দুধ পৌঁছানো নিশ্চিতে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। দেশে খাবারের অভাব নেই উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিএনপি করোনার শুরুতে বলেছিল যে, দেশে করোনাকালে দুই লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু তাদের কথা সত্য হয়নি। একজন মানুষও না খেয়ে মরেনি। মন্ত্রী বলেন, আমি খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে বলতে চাই, দেশে কোনো খাবারের সংকট নেই। উল্টো সর্বকালের সেরা মজুত রয়েছে সরকারের হাতে। সে মজুত থেকে নিম্নআয়ের মানুষকে ওএমএসের (খোলাবাজার) মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। কেউ না খেয়ে বা আধাপেটে নেই। বিএনপির অপপ্রচার থেকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খুব সাবধানে থাকতে হবে আমাদের। তারা উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করতে বিশ্ব মহলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নিয়োগ করেছে লবিস্ট। দেশটাকে তারা আবারও অস্থিতিশীল করতে চায়। তিনি বলেন, যারা উন্নয়নের বাধা দিচ্ছে, তারা এ দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে সার নিতে গিয়ে ১৯ জন কৃষক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে সব উন্নয়ন হয়েছে। তারা (বিএনপি) এসে আবার সেটা ২০০১ সালে বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০০৮ সাল থেকে আমরা আবার উন্নয়ন করছি। এসময় খাদ্যমন্ত্রী দাবি করেন, দেশে এখন কোনো মঙ্গা নেই। মাছ-মাংস, দুধ-ডিমের অভাব নেই।