• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনী সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Reporter Name / ১৬৪ Time View
Update : বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীরা যাতে কোন রকম ধ্বংসাত্বক কর্মকা- চালাতে না পারে সে জন্য সশ¯্র বাহিনীসহ সকল বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মত এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। কিন্তুু, যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। যার কিছুকিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে তা কিন্তু আমরা জানি না। শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তাঁর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি’র প্রধানদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। সমস্ত বিষয়টাই একটু রহস্যজনক। এজন্য সবাইকে বলবো একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সে গুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দেশের ব্যক্তি বিশেষের প্ররোচনায় বিশ^ ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে তাঁর সরকার ঘোষণা দিয়েছিল নিজেদের অর্থায়নে করবে, না হলে করবে না। তাঁর সরকার সেই পদ্¥া সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন. ফেরীতে আগুন এমনকি সীতাকুন্ডে যে আগুনটা সেটা একটা জায়গা থেকে লাগতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে। আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে যেখানে দেখা গেছে রেলের চাকার নিকটে আগুন জ¦লছে, সেটা কী করে সম্ভব সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. মজিবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে এনে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এসবের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস সম্পর্কেও সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেমন একদিকে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের তাদের নানা কর্মকা- পরিচালিত করে থাকে। সেজন্য তাঁর সরকার আধুনিক বিশ^ এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসএফসহ অন্যান্য বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কারণ, আমাদের বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকেও দমন করতে হবে। অতীতে বিভিন্ন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই তাঁর সরকার জোট সরকারের আমলে সৃষ্ট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে এবং মনে রাখতে হবে আমরা যখন এগিয়ে যাই তখনই এ ধরনের ঘটনা কোন কোন মহল ঘটনানোর চেষ্টা করে থাকে। এটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। সে জন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ বলেন, হাইটেক পার্ক ও কম্পিউটার ল্যাব করে প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছে। পাশাপাশি, স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, রাজধানী বাসীর চলাচল সুবিধার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পও আজকে দৃশ্যমান। এছাড়া, এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম, সেই ড. ইউনূস ব্ঈেমানি করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি তার বন্ধু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামীর ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে’ তিন লাখ ডলার ডোনেশনও দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, হিলারি ক্লিনটন তাঁকে ফোনও করেছেন। তাঁর কাছে ধর্ণাও দেন এবং যাকে তিনি আইনের কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বার বার মেইল পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, দুর্নীতির প্রমাণ করতে হবে। পরে কানাডার আদালতে এটা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনুসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবো। কাজেই, খুব স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ভেবেছিল এটা বোধহয় আমরা কোনদিন করতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি। একজন রাজনীতিকের কাছে জনগণই তাঁর ‘প্রাণ শক্তি’ এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কখনো যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন, সেই বিষয়টি যারা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জোর করে দেশে ফিরে আসার পর থেকে বারংবার হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়ে আল্লাহর রহমতে এবং দলের নেতা-কর্মী সৃষ্ট মানবঢালে প্রাণে রক্ষা পাবার কথা স্মরণ করে তাঁকে নিরাপত্তা প্রদানকারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি নিজে সব সময় শঙ্কায় থাকেন বলেও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এজন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা হত্যাকান্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছিলেন বলেই দেশ আজ অভিশাপ মুক্ত হয়েছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে যে সব বিদেশী অতিথিরা আসেন তারা এসএসএফ-এর ভূয়ষী প্রশংসা করেন এবং তিনি নিজেও তাদের পারদর্শিতায় গর্ববোধ করেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটাই সব সময় মাথায় রাখতে হবে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা শৃঙ্খলা সবকিছু মেনেই চলতে হবে এবং আমাদের এসএসএফ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তিনি বলেন, তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের সাথে একটু কথা বলা, জনগণের সঙ্গে একটু মেশা এটাই একমাত্র কাজ। এটাই আমাদের শক্তি। আর কোন শক্তি কিন্তু নেই। বিরোধী দলে যখন ছিলাম মানুষকে কি দিতে পেরেছি, একটু কথা, একটা আস্থা বা মানুষের বিশ্বাস অর্জন। সেজন্য জনবিচ্ছিন্ন যেন না হয়ে পড়ি সেটা একটু দেখতে হবে। কারণ, পানি থেকে মাছ তুলে ডাঙায় রাখলে যে রকম আমরা যদি জনগণের সঙ্গে মিশতে না পারি তাহলে আমাদের অবস্থাও কিন্তু সে রকমই হয়ে যায়। তিনি বলেন, জনগণই আমাদের প্রাণশক্তি। তাদের জন্যই আমার এ রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীত্ব নিজের কাছে ভোগের কোন বস্তু নয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা অতীতে মন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ও হয়েছেন কিন্তু তাঁরা ৫টা ভাই বোন কখনোই ক্ষমতা ভোগ করার কথা চিন্তা করেননি। যা তাদের বাবা-মায়ের নির্দেশ ছিল। দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের জীবন যাপনের ধরনের কোন পরিবর্তন আনেন নি বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি সব সময় যখন দোয়া করি আমি আমার ছেলে মেয়ের জন্য যেমন দোয়া করি, নাতি পুতির জন্য যেমন দোয়া করি, তেমনি ঠিক সেই রকমভাবে আমার সাথে যারা কাজ করেন প্রত্যেকের জন্য আমি দোয়া করি। এসএসএফের জন্য বিশেষ করে দোয়া করি। আমার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সব সময় আমি চিন্তায় রাখি। শেখ হাসিনা বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ আমরা শুরু করি। পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ জাতির পিতাই শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ভৌগলিক সীমারেখায় আমরা হয়তো ছোট, কিন্তু জনসংখ্যায় বড়। আমরা বড় হয়ে চলবো, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবো। আমরা দেশটাকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি সেই মর্যাদা নিয়ে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি তা নিয়েই যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারি এবং দেশি-বিদেশি কোন শক্তিই যেন এই অগ্রযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে। তিনি বলেন, জাতির পিতার করে দেয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এই নীতি নিয়েই বাংলাদেশ আগামীতেও সামনে এগিয়ে যাবে।
জনশুমারির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তাহব্যাপী ষষ্ঠ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’র উদ্বোধন করেছেন। গতকাল বুধবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বহুল প্রতীক্ষিত জনশুমারির উদ্বোধন করেন তিনি। জনশুমারি ত্রুটিমুক্ত ও সফল করতে দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে ‘আদমশুমারি’ হয়। এর ১১ বছর সময়েরও পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ডিজিটাল পদ্ধতিতে সপ্তাহব্যাপী জনশুমারি পরিচালনা করছে। জনশুমারির জন্য মাঠপর্যায়ে ১৫-২১ জুনের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, যা ‘শুমারি সপ্তাহ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জনশুমারিকে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য জনশুমারির তথ্য ও পরিসংখ্যান খুবই জরুরি। জনশুমারির প্রশ্নপত্রে প্রায় ৩৫টি প্রশ্ন থাকবে, যেখানে গণনাকারী ট্যাব ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর নেবেন। ড. আলম বলেন, জনগণকে জনশুমারির আওতায় আনার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে গণনা প্রক্রিয়ার আওতায় আসে এবং কেউ যাতে বাদ না পড়েন, সেদিকেও জোর দেওয়া হয়েছে। একবার জনশুমারি সম্পন্ন হলে প্রায় দুই কোটি লোক অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনসংখ্যা ও গৃহশুমারি ২০২২ প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গৃহহীন ও অসহায় মানুষের তথ্য সংগ্রহের জন্য এরইমধ্যে শহর ও গ্রাম উভয়ক্ষেত্রেই প্রায় দুই হাজার নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণনাকারীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন এবং কোনো অনুরোধ থাকলে গণনাকারীরা রাতেও মানুষের বাড়িতে যাবেন। এ জনশুমারি সফল করতে প্রায় তিন লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন গণনাকারী, ৬৩ হাজার ৫৪৮ জন সুপারভাইজার, তিন হাজার ৭৭৯ জন আইটি সুপারভাইজার, তিন হাজার ৭৭৯ জন জোনাল অফিসার, ১৬৩ জন জেলা জনশুমারি সমন্বয়কারী এবং ১২ জন বিভাগীয় জনশুমারি সমন্বয়কারী বিভিন্ন স্তরে শুমারি কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবেন। বিবিএস সদর দপ্তরে এরইমধ্যে একটি অত্যাধুনিক কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে যে কেউ ০৯৬০২৯৯৮৮৭৭ নম্বরে ফোন করে আদমশুমারি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য পেতে পারবেন। দেশের প্রথম আদমশুমারি ও আবাসন শুমারি ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তারপর দ্বিতীয় গণনা ১৯৮১ সালে, তৃতীয় গণনা ১৯৯১ সালে, চতুর্থ গণনা ২০০১ সালে এবং পঞ্চম শুমারি ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। জনশুমারি পরিচালনার জন্য ওয়েবভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড সেন্সাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) এবং ভৌগলিক তথ্য সিস্টেম (জিআইএস) এরইমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। গণনা এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রণ মানচিত্রও প্রস্তুত করা হয়েছে। জনশুমারিতে ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থাভিত্তিক ডিজিটাল মানচিত্র ব্যবহার, ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্যাব’ ব্যবহার করে কম্পিউটার সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের সব পরিবারের তথ্য একযোগে সংগ্রহ করা হবে। এদিকে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর মূল তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবন থেকে শুরু হয়ে বিজ্ঞান জাদুঘরসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পরিসংখ্যান ভবনে গিয়ে শেষ হয় র‌্যালিটি। এর আগে ভোর ৬টা পর্যন্ত ভাসমান মানুষ গণনা করা হয়। পরে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় শুমারির মূল কাজ। র‌্যালিতে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম, জনশুমারি প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তা, বাংলাদেশ স্কাউটস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), গার্লস গাইড’র সদস্যরা এতে অংশগ্রহ করেন। বিবিএস জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৫-২১ জুন দেশব্যাপী দেশের প্রতিটি খানার তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। গণনাকারীরা দেশের প্রতিটি খানায় গিয়ে ট্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেট পারসোনাল ইন্টারভিউইং (কাপি) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করছেন। গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে দেশের প্রায় ২০ হাজার স্পট থেকে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ গণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ জনশুমারি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category