• শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

পাঠ্যবই ভেতরে-বাইরে দুর্দশাগ্রস্ত, দায় নেবে কে

Reporter Name / ৮০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

যে জাতি যতো শিক্ষিত, সে জাতি ততো সভ্য এবং একইসাথে ততো সমৃদ্ধ। সমৃদ্ধ ও উন্নত জাঁতি গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এজন্য খুব শুরুকাল থেকেই শিশু-কিশোরদের ভেতর শিক্ষার বীজ রোপণ করতে হবে। তাঁদের ভেতর পড়াশুনার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে আনন্দদায়ক করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তাঁদের মতে, শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিতে হবে সুন্দর ও ভাল মানের বই, যেন বই দেখে তাদের মন ভাল হয়, পড়ার আগ্রহ জন্মে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে শিশু-কিশোরদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের দশা খুব করুণ।বিনামূল্যে প্রদানকৃত এসব বই নিম্নমানের কাগজে ছাপানো হয় বলে অভিযোগ সামনে এনেছে একটি পক্ষ। তবে সরকারকে বিপাকে ফেলতে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে দাবি করছে আরেকপক্ষ। এ নিয়ে পালটাপালটি অভিযোগ এখন তুঙ্গে। যদিও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, যে প্রক্রিয়ায় কাজ হয়েছে তাতে নির্ধারিত মানের বাইরে বই মুদ্রণ ও সরবরাহ সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়, সরকার এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই মুদ্রণের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি সাড়ে তিন কোটি মুদ্রণ বাকি রেখেই শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর ইতোমধ্যে ৫ সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রায় অর্ধকোটি বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই বেশি। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বইও আছে। সংশ্লিষ্ট মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগেভাগে ‘পিডিআই’ রিপোর্ট (বই সরবরাহের প্রাক-পরিদর্শন প্রতিবেদন) নিয়ে গেছে এনসিটিবি থেকে। যে কারণে কাগজে-কলমে বই সরবরাহ হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।

এই বিলম্ব পরিস্থিতির জন্য করোনার প্রভাব আছে বলেও আত্মপক্ষসমর্থনকারীরা দাবি করছেন। এটি ঠিক যে, করোনার কারণে পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ শুরুতে একটু সমস্যায় পড়ে। তবে এটি ছাড়াও জানা যায়, মুদ্রণকাজে সংশ্লিষ্ট এনসিটিবি সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে। যে কারণে বিভিন্ন স্তরের দরপত্র একাধিকবার ডাকতে হয়েছে। ফলে মুদ্রণকাজ শুরুতে বিলম্ব হয়। আর এ কারণে মাধ্যমিক স্তরের বই সরবরাহ হয়নি সময়মতো। এমনকি প্রাক-প্রাথমিকের সব বইও এখন পর্যন্ত সরবরাহ হয়নি বলে জানা গেছে।

এই সিন্ডিকেট তৎপরতা নতুন কোন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেট চক্রের দুষ্ট ভূত এনসিটিবির ঘাড়ে চেপে বসে আছে। জানা যায়, সিন্ডিকেট ভাঙতে ২০২০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বেশির ভাগ কাজে দরপত্র দাখিল করে অগ্রণী প্রিন্টার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রাক্কলন এবং আগের বছরের চেয়ে তখন দর কম পড়ায় বেশির ভাগ কাজ পেয়ে যায় তারা। ফলে চাপে পড়ে সিন্ডিকেট। এরপর গত বছর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চেষ্টা করে। অন্যদিকে যাতে জিম্মি হতে না হয় সে লক্ষ্যে এনসিটিবির একটি অংশ অগ্রণী প্রিন্টার্সকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। সংস্থাটির হস্তক্ষেপে নতুন মেরুকরণ ভেঙে যায় এবং আগের দু’বছরের মতোই অগ্রণী আলাদা দরপত্র দাখিল করে। ফলে পাঠ্যবই সিন্ডিকেটমুক্ত হয়। এরপর পাঠ্যবই নিয়ে চক্রটি উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করে।

পাঠ্যবইয়ের নিম্নাবস্থার জন্য মুদ্রণ শিল্প সমিতি অবশ্য নিজেদেরকে দোষারোপ করতে নারাজ। তাদের পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, পাঠ্যবই নিয়ে সিন্ডিকেট হয়েছে, তবে সেটা মুদ্রাকর পর্যায়ে নয়। অফিসের লোকজন জড়িত। যে কারণে নিম্নমানের বই সরবরাহ হওয়া সত্ত্বেও ধরেনি।

বিনামূল্যে বিতরণ করা পাঠ্যবইয়ের শুধু বাঁধাই মান নয়, অভিযোগ আছে বইয়ের ভেতরে বিরাজমান অসংখ্য ভুল নিয়েও। এই অভিযোগ যেহেতু স্পষ্ট তাই এনটিসিবি সেটা কখনো অস্বীকারও করতে পারে না। প্রতিবছর বিভিন্ন মহল থেকে বইয়ের ভেতরের ভুল আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু এই অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি এখনো। প্রতিবছরই পাঠ্যবইয়ে ভুরিভুরি ভুল থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবারই ভুল চিহ্নিত হওয়ার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, ভুলের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। লেখকদের সঙ্গে আলাপ করে করণীয় ঠিক করা হবে। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিয়মিত দায়সারা বক্তব্য দিয়ে এসব ভুলের দায় এড়ানো যায় না। এই বিষয়ে শক্ত আইনি কাঠামো থাকা দরকার। তাহলে লেখক, প্রকাশক থেকে শুরু করে সবাই সতর্ক হবে।

২০২১ সালের পাঠ্যভুক্ত পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘অবাক জলপান’ অধ্যায়ে লেখক পরিচিতিতে বলা হয়েছে সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণির ‘ছায়াবাজি’ অধ্যায়ে এই লেখকের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এনসিটিবির একই লেখকের দুই লেখায় দুই তথ্যের কারণে বিভ্রান্ত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকরাও।

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ‘পোস্টার’ অধ্যায়ে লেখকের পরিচয়ে বলা হয়েছে, আবুল হোসেন খুলনা জেলার ফকিরহাট থানায় জন্মগ্রহণ করেন। কার্যত, ফকিরহাট থানা বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। ফকিরহাট একসময় খুলনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই হিসেবে লেখার ক্ষেত্রে ‘তৎকালীন’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত ছিল। বইটিতে তা উল্লেখ করা হয়নি।

অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ের ২৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘বিব্রত’ শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘ব্যাকুল’, ‘ব্যতিব্যস্ত’। বাংলাদেশের সংবিধানে এই পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হলেও নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের সংবিধান অধ্যায়ে ৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে এই পর্যন্ত মোট ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে।’

শিশু-কিশোরদের মন কোমল। এই বয়সে তারা যা শিখবে তাই তাদের মনে গেঁথে যাবে। কাজেই পাঠ্যবইয়ে যদি তারা ভুল পড়ে, সেটিই তাদের মনে বদ্ধমূল হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের ভাষ্য, ‘একটা দুর্ঘটনা যেমন সারা জীবনের কান্না, তেমনি পাঠ্যপুস্তকের একটি ভুলও একজন শিক্ষার্থী, একটি প্রজন্মের জন্য বড় আকারের ক্ষতি। এই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে যেন ভুল ম্যাসেজ না যায়, সেটি দেখার জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। যেন একই ভুল দ্বিতীয়বার না হয়। যেকোনো ভুলের বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category