• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

পুরনো উড়োজাহাজ কিনা হচ্ছে বিপুল টাকায়

Reporter Name / ১০৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিপুল টাকা খরচ করে পুরনো দুটি উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে বিমান। বর্তমানে সাশ্রয়ী মূল্যের নামে কেনা কম গতিসম্পন্ন পুরনো উড়োজাহাজ দিয়ে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু পুরনো উড়োজাহাজগুলোতে প্রায়ই নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে মাঝে মাঝেই অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চরম শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। পাশাপাশি বারবার ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় সেগুলো সারিয়ে আনতেও মোটা অংকের ক্ষতিতে বিমানকে পড়তে হয়। সেজন্য বিমান সংশ্লিষ্টদের অনেকেই পুরনো উড়োজাহাজ না কিনে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কারণ ২০১৪ সালে বিমানবহরে যুক্ত হওয়ার এক বছর পরই ড্রাই লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজটির (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসএল) একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরবর্তী সময়ে ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা ইঞ্জিন দিয়ে উড়োজাহাজটি সচল করা হয়। আর নষ্ট ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য লন্ডনের ইউনাইটেড এয়ারলাইনসে পাঠানো হয়। ওই ইঞ্জিন মেরামত করে ফেরত আনার আগেই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন আবারো নষ্ট হয়। ফলে আবারো ইজিপ্টএয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকা ভাড়ায় আরেকটি ইঞ্জিন আনা হয়। আর বিকল ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য আবার ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের কাছে পাঠানো হয়। এভাবে বারবার ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় বিপত্তির মধ্যে পড়ে বিমান। আবার শর্ত অনুযায়ী পাঁচ বছর না হওয়ায় চুক্তি বাতিলও করতে পারছিল না বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে উড়োজাহাজ দুটি ব্যবহার না করেই বিমানকে ভাড়া দিতে হচ্ছিল। একই রকমভাবে লিজে নেয়া অন্যান্য উড়োজাহাজেও প্রায়ই ত্রুটি দেখা দেয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে ইজারায় নিয়ে চালানো দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে। ২০০১ সালে তৈরি করা পুরনো ওই উড়োজাহাজ দুটি কিনতে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। উড়োজাহাজ দুটি ক্রয়ের আমদানি অনুমতির জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বিমানের বহরে থাকা ইজারায় নেয়া উড়োজাহাজগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়। তারপরও বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এমএসএন২৮৬৪৮, এস২-এএফএল এবং এমএসএন২৮৬৫৩, এস২-এএফএম উড়োজাহাজ দুটি কিনতে আয়ারল্যান্ডের সেলেসটিয়াল এভিয়েশন ট্রেডিং ৪১ লিমিটেডের সঙ্গে গত ২৩ ডিসেম্বর চুক্তি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। উড়োজাহাজ দুটি একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ড্রাই লিজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল। যা বর্তমানে বিমানের বহরে যুক্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, কিনতে যাওয়া বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার করে। ওই হিসেবে স্থানীয় মুদ্রায় প্রতিটি উড়োজাহাজের দাম পড়ছে ৮৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ টাকা। উড়োজাহাজ দুটি ২০০১ সালে তৈরি করা এবং ২০০৯ সাল থেকে ড্রাই লিজে বিমান বহরে যুক্ত আছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিজস্ব অর্থ দিয়ে উড়োজাহাজ দুটি কেনা হবে। তাছাড়া উড়োজাহাজ দুটির জন্য ইতিমধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে ইন্স্যুরেন্স পলিসি নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কারিগরি ছাড়পত্রও পাওয়া গেছে।
সূত্র আরো জানায়, উড়োজাহাজ দুটি বিমানের বহরে সংযুক্ত থাকায় জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের যাত্রী ধারণক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে এবং যাত্রী সাধারণের জন্য বিমানের সেবার মান উন্নয়নে ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। উড়োজাহাজ দুটি কেনা হলে বিমানের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের নির্বিঘেœ সেবা দেয়া সম্ভব হবে। বিষয়টি সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করে উড়োজাহাজ দুটি ক্রয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অনুকূলে ১৬৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৫০ টাকা আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি লিজ নেয়া। এখন দুটি উড়োজাহাজ কেনা হলে লিজে নেয়া উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩টি। ওসব বিমানের মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৪, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, ৬টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ডিসি ৮-৪০০। বর্তমানে ১৯টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালাচ্ছে বিমান। তবে তার বেশির ভাগই স্বল্প বা মাঝারি দূরত্বের রুট। তাছাড়া দেশের সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত চলছে বিমানের ফ্লাইট।
এদিকে বিমান কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থাটি বেশির ভাগ অর্থবছরে লোকসান করেছে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিমান। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরুর (২০২০-২১) অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের যাত্রী কমেছে ৫২ শতাংশ। ফলে সংস্থাটির মোট রাজস্ব আহরণ আগের বছরের চেয়ে কমেছে ১৮ শতাংশ। তবে একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি তাদের পরিচালন ব্যয় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কমিয়েছে। তাতে আগের অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ ৮১ কোটি টাকা লোকসান করলেও গত অর্থবছর শেষে ১৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category