• মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার

পেঁয়াজ-তেল-চিনির শুল্ক স্থগিতে চিঠি দেয়া হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

Reporter Name / ৪৩৪ Time View
Update : সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর সব ধরনের শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি সস্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক মাস বাড়তি দাম থাকার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তারপরও আমরা বিভিন্ন রকম শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। এদিকে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, আড়াই থেকে তিন-চার মাস দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর মতো পেঁয়াজের মজুত থাকা সত্ত্বেও আগামী এক মাস পেঁয়াজের বাজার নাজুক থাকার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের বাজারে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ শতকরা ৮০ ভাগ, বাকি ২০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করা। মূলত ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয়। কিছু মিয়ানমার থেকে আসে। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে সেখানকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এর প্রভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য সচিব বলেন, ভারতের পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেটা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এরইমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এনবিআরকে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুত আছে আমাদের। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়টাতে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। তার আগে এক মাস হয়তো পেঁয়াজের দাম বেশি থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেও আমাদের চেষ্টা থাকবে, যেন যৌক্তিকভাবে মূল্য প্রতিফলিত হয়, অতি মুনাফা যাতে না হয়। তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে, দ্রব্যমূল্য অতিমাত্রায় নেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা নজরে রাখার জন্য। পেঁয়াজের বাজার বেশি খারাপ হবে না, তবে উৎপাদন পরিস্থিতি ও ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে আগামী এক মাস নাজুক অবস্থা থাকবে। তবে গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কমেছে। সভার শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি অত্যাবশ্যকীয় কয়েকটি পণ্যের (ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মশুর ডাল) আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রভাবে স্থানীয় বাজারে ঊর্ধ্বমূল্য পরিলক্ষিত হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে জনস্বার্থে পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত সয়াবিন, অপরিশোধিত পাম ও অপরিশোধিত চিনির শুল্ক কমাতে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্ন করে আইপি ইস্যুকরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন দু’টি টিম ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাজার মনিটরিং করা হয়। সারাদেশে জেলা-উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নের্তৃত্বে এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে ও সর্বোপরি পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। টিসিবি সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন (মাসে ২০ থেকে ২৫ দিন) সারাদেশে ৪০০ ট্রাকে ৪০০ থেকে ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে ট্রাক প্রতি পেঁয়াজ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে। এছাড়া পেঁয়াজের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য (চিনি, সয়াবিন তেল ও মশুর ডাল) নিয়মিত বিক্রি করছে টিসিবি। টিসিবি ঢাকাতে ৮০ থেকে ৯৫টি ট্রাকের মাধ্যমে ট্রাকসেল নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ভারত ও তুরস্ক থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এরইমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। যা থেকে বর্তমানে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্রয় করা আরও পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য পাইপ লাইনে রয়েছে। বাজারদর বিবেচনায় টিসিবির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পেঁয়াজ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। সেইসঙ্গে মন্ত্রণালয়য়ের নির্দেশক্রমে ভারত ব্যতিত পেঁয়াজের বিকল্প উৎস খোঁজার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category