গাজীপুর প্রতিনিধি :
গত ১৪ নভেম্বর দৈনিক আইন বার্তা পত্রিকায় ‘গাজীপুরের গাছায় এসএসসি পরীক্ষা : পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে টাকা দাবী’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। এব্যাপারে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিস। গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, সংবাদ প্রকাশের পর তারা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার যোবায়ের সাঈদকে প্রধান করে বুধবার দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির অপর সদস্য হলেন গাজীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহরিয়ার মানযিশ। এদিকে বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলটিতে পাঠদানের মতো কোন পরিবেশ নেই। কথিত স্কুল ভবন হিসাবে ব্যবহৃত তিন তলা ভবনটির নিচ তলার একটি ফ্লোর গার্মেন্ট কারখানার যন্ত্রাংশের দোকান হিসেবে, অপর তিনটি রুম একটি মাদ্রাসা হিসাবে এবং একটি রুম বাসা ভাড়া হিসাবে ববহার হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়ও বাসা ভাড়া দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্কুলের সামনে রেডি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হবে মর্মে নোটিশ টানানো রয়েছে। পাশেই অপর একটি ছোট্ট সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এই সম্পত্তি আইএফআইসি ব্যাংক বোর্ড বাজার শাখা, গাজীপুর এর নিকট দায়বদ্ধ’। ওই ভবন বা তার আশপাশেও স্কুলের কোন সাইনবোর্ড নেই। স্থানীয়রা জানান, স্কুলটিতে কোন পাঠদান হয় না। শুধুমাত্র বিভিন্ন কিন্টারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাণিজ্যিক ভিত্তিক উক্ত স্কুলের নিবন্ধনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায়ও ওই স্কুল থেকেই বহিরাগত ৩০৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। অথচ বোর্ড স্বীকৃত এধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতির অন্যতম প্রধান শর্ত হিসাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজস্ব জমি থাকতে হয়। নিজস্ব জমি, ক্যাম্পাস ও অন্যান্য মৌলিক শর্ত পূরণ ছাড়াই রহস্যজনকভাবে বিএম উচ্চ বিদ্যালয় ২০১৩ সালের ৭ মে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর ১৮৬/গাজী/৪৮৩৯ নং স্বারকে স্বীকৃতি পায়।
গাজীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৪ জুন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান (বাবুল) স্থানীয় কলমেশ্বর মৌজার এসএ ৬০, ৭২ নং এবং আরএস ২২৯ ও ২৪২ নং খতিয়ানে এসএ ৬৩২ ও ৬৩৩ এবং আরএস ৭৯৯ ও ৮০৯ নং দাাগে মোট ৭৯ শতাংশ জমি গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে স্কুলের নামে দানপত্র দলিল করে দেন। পরবর্তীতে দানপত্র দলিলমূলে স্কুলের নামে উক্ত ৭৯ শতাংশ জমি নামজারি জমাভাগ (খারিজ) করেন। স্থানীয় গাছা ভূমি অফিসে যার জোত নং- ৮৫৩৭। এদিকে গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে উক্ত দানপত্র দলিল ও গাছা ভূমি অফিসে রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, স্কুলের নামে দানপত্র দলিল ও ভূমি অফিসে এ দলিলমূলে সৃষ্ট নামজারি জমাভাগ বা উক্ত জোতের কোন অস্তিত্ব নেই। গাছা ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আলী হোসেন জানান, তার অফিসে কলমেশ্বর মৌজায় ৮৫৩৭ নম্বর জোতের কোন অস্তিত্ব নেই, জোতটি সম্পূর্ন ভূয়া।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহরিয়ার মানযিশ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ অফিসে নতুন যোগদান করেছি। স্কুলটি কিভাবে অনুমোদন পেল তা আমি বলতে পারছি না।
এব্যাপারে গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, আমরা বি এম উচ্চ বিদ্যালয়ের (ইআইআইএন নং- ১৩৪২৩৪, স্কুল কোড নং- ২২১১) অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে স্কুলের নামে নিজস্ব জমির দলিল ও খাজনা খারিজ জাল প্রমাণ হলে স্কুলের নিবন্ধন বাতিল হবে। উল্লেখ্য, গত শনিবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে আট হাজার টাকা করে দাবী করায় অবিভাবক ও শিক্ষার্থীরেদর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলটিতে পুলিশ পাঠানো হলে প্রধান শিক্ষকসহ সব স্টাফ পালিয়ে যান।