নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার ঘটনায় অনারারি (অবৈতনিক) এক মেডিকেল অফিসারকে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অস্ত্রোপচারের সময় উপস্থিত থাকা হাসপাতালের দুজন স্টাফ নার্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম এ ব্যবস্থা নেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিষয়টি অবহিত করেন হাসপাতাল পরিচালক। এর আগে প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শনিবার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রতিবেনের আলোকে এ ব্যবস্থা নেন হাসপাতালের পরিচালক। অব্যাহতি দেওয়া চিকিৎসক হলেন হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসার মো. তারেক। তিনি এমবিবিএস পাস করে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ছয়মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের দুজন স্টাফ নার্সকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন স্টাফ নার্স মিঠু রানী দাস এবং সুমী সরকার। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক কন্যাসন্তান জন্ম দেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার শারমিন আক্তার শীলা। তার স্বামীর নাম জিয়াউল হাসান। তারা ঝালকাঠীর নলছিটি এলাকার বাসিন্দা। অস্ত্রোপচারের পর তার পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেন এক চিকিৎসক। সুস্থ হয়ে শারমিন বাড়ি ফেরার কিছু দিন পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ধীরে ধীরে সেখানে পচন ধরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন শারমিন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তখনও অভিযুক্ত চিকিৎসকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, শারমিনের পেটের ভেতর গজ রয়ে গেছে। পরে ২২ মে পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তা অপসারণ করা হয়। সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হক জানান, শারমিন আক্তারের পেটে গজ ছিল। দীর্ঘদিন গজ থাকায় পেটের ভেতরে পচন ধরে নাড়ি ফুটো হয়ে যায় শারমিনের। অস্ত্রোপচার করে গজ অপসারণ করা হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, কোন চিকিৎসক ও নার্সরা অংশ নিয়েছিলেন তা শনাক্ত এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সার্জারি বিভাগের প্রধান এবং মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. নাজিমুল হকের নেতৃত্বে কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশীদ জাহান ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান শাহীন। তিনি আরও বলেন, শনিবার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসার মো. তারেকের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। পাশাপাশি প্রসূতির অস্ত্রোপচারের সময় উপস্থিত থাকা হাসপাতালের দুজন স্টাফ নার্সেরও কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটে গজ রেখে দেওয়ার ঘটনায় ভিকটিম শারমিন আক্তারকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট করা হয়। পাশাপাশি ভিকটিমের পরিবারের খরচ নির্বাহের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জীবননেছা মুক্তা জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করেন। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল মেডিকেলের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। ৮ জুন ভিকটিম শারমিন আক্তার শিলাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পৃথক রুলে ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসায় অবহেলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীকে যথোপযুক্ত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত চিকিৎসা দিতে বরিশাল সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রিটের ওপর আদেশের নির্ধারিত দিনে (৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।