নিজস্ব প্রতিবেদক :
জেল আপিল নিষ্পত্তির পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদ-ের রায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়ুর করা নিয়মিত আপিলের বিষয়ে শুনানি ও আদেশর জন্যে পিছিয়ে দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ নট টুডে (আজ নয়) বলে আদেশ দেন। নির্ধারিত দিনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আদালতে না বসায় গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এদিকে আসামিদের করা আপিল আবেদন নিয়ে গত সোমবার আপিল বিভাগে দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার সাথে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান ও অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডের পক্ষে আইনজীবী সুফিয়া খাতুন শুনানি করেন। শুনানিতে ওইদিন আদালত বলেছিলেন, জেল আপিলের সঙ্গে সঙ্গে আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ার দায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের। তবে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবীরা দাবি করেন, এর দায় সুপ্রিম কোর্টের সেকশনের। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। শুনানিতে নিয়িমত আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে উঠে এসেছে, জেল আপিল শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীর নিয়মিত আপিলের কথা উল্লেখ করা উচিত ছিল, যেটা করা হয়নি। চার বছর পরে ওই নিয়মিত আপিল আদালতের কার্যতালিকায় এলে কোনো কোনো আইনজীবী যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তার সমালোচনা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। ‘আসামির আপিল নিষ্পত্তির চার বছর আগেই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে’ এমন শিরোনামে গত ৩ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরের দিন আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে করে বলেন, ফাঁসি কার্যকরে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। নিয়ম অনুযায়ী কোনো আসামির আপিল এবং জেল আপিল হয়ে থাকলে দুটি একসঙ্গে শুনানি হয়। তবে এ মামলায় জেল আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলেও অনিষ্পত্তি থেকে যায় আসামিদের করা আপিল। যা ফাঁসি কার্যকরের চার বছর পর আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় শুনানির জন্য আসে। এটি নিয়েই আলোচনার সৃষ্টি হয়। মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি মোকিম ও ঝড়ুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন একই এলাকার সাবেক মেম্বার মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদ-, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্তরা হলেন- একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু। এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। পরে মোকিম ও ঝড়ু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। আইনজীবী হুমায়ুন কবীর বলেন, মোকিমের পরিবার জানায়, ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এমনকি অপর আসামি ঝড়ুর মৃত্যুদ-ও কার্যকর হয়েছে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ সুপার মো. কামাল হোসেন সই করা এক ডকুমেন্টে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর মামলায় বিচারিক আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। এরপর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে আসামি দুজনের ফাঁসি হয়। এদিকে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ থেকে জেলার তুহিন কান্তি খান সাংবাদিকদের জানান, খুলনা অঞ্চলের আওতাধীন যশোর কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। কারাগার থেকে আরও জানানো হয়, হাইকোর্ট মৃত্যুদ- অনুমোদনের পর মোকিম ও ঝড়ু জেল থেকে আপিল করেছিল। সেটি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর দুজনের মৃত্যুদ- বহাল রাখে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।