মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, ফেনী জেলা প্রতিনিধি :
সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নে বদর মােকাম খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরী করে ফসলী জমির ক্ষতি করার ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন। আগামী ৩০ অক্টোবর ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে একজন দক্ষ কর্মকর্তা নিয়ােগপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকান্ডের উপর অসন্তোষ। খালের স্বাভাবিক জলাধার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফেনী জেলার খাল ও নদীর স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ও স্বাভাবিক পানি চলাচল রাখার উদ্দেশ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। আদালতের স্টেনোটাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল করিম মজুমদার জানান, ফেনীর স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নে বদর মােকাম খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির সংবাদটি আদালতের নজরে আসে। গত ২০ অক্টোবর স্থানীয় পত্রিকায় মতিগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসন জাল অপসারণ করলেন বাবু চেয়ারম্যান শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটিও আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আদালত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখেন, স্থানীয় বদর মোকাম খালের মধ্যে বাঁধ থাকায় ফসলী জমির পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এটি শাস্তিযোগ্য ও বিচারযোগ্য অপরাধ মর্মে আদালতে প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ আইন প্রনয়ণ করে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা প্রদান করেন। জনজীবনের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত ও পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ নির্মূল করার লক্ষ্যে এই সংবাদকে আমলে নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এই মর্মে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়। প্রকাশিত সংবাদ বিবেচনায় নিয়ে স্বপ্রনােদিত হয়ে অপরাধ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন আদালত।
সরেজমিনে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আসামীদের চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থানীয় বদর মোকাম খালের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও স্বাভাবিক পানি চলাচল এবং জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনের উদ্দেশ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অপরাধ থাকলে তাও উদঘাটনসহ তদন্ত করে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে একজন দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
এই ঘটনা তদন্তের স্বার্থে উপজেলা সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম জহিরুল হায়াত, সোনাগাজী সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোঃ সাজেদুল ইসলাম ও মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বাবুকে আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত; ফেনীতে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক প্রভাত আলো পত্রিকায় “ফেনীর বিসিকে ময়লার আগুনে মারা যাচ্ছে। গাছ দুর্ঘন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ” এই শিরােনামে প্রকাশিত সংবাদটি স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নজরে আসে। একজন দক্ষ কর্মকর্তা নিয়ােগপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাখিলের জন্য ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। ফেনীর স্থানীয় সাপ্তাহিক পত্রিকার ৪ অক্টোবর “ বহুমূখী দূষণের কবলে কালিদাস পাহালিয়া নদী” শিরোনামে সংবাদটি আইনজীবি বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, কাজী মোঃ শাহ জালাল ও মোঃ আবুল বাশ্বার ৫ অক্টোবর আদালতে উপস্থাপন করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে আগামী ২৪ অক্টোবর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রভাত আলাে পত্রিকায় “বন বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে ফেনী নিউ মার্কেটের গাছ কেটে ফেলার বিষয়ে তদন্ত করে সামাজিক বন বিভাগকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ফেনী সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্ন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দাগনভূঞায় দাদন খালের পরিবেশ দূষণের বিষয়ে ৪ অক্টোবরের মধ্যে ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালককে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরিবেশ অধিদপ্তর নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়।