নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশে বছরজুড়ে ছোট-বড় গড়ে ২০ হাজারেরও বেশি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এসব অগ্নিকা-ে বছরে গড় মৃত্যু দেড় শতাধিক। গড় ক্ষয়ক্ষতি কয়েক’শ কোটি টাকা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ হাজার ৮৯৯টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এদিকে বিভিন্ন সময় অগ্নিকা-ের ঘটনায় অকালে ঝরে অগণিত প্রাণ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২ সালের প্রথম চার মাসেই (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশে অগ্নিকা-ে ৬৫৩ জনের মৃত্যু এবং আহত হন ৬ হাজার ২৭ জন, ২০২১ সালে মারা গেছেন ২১৯ জন এবং আহত ৫৭০, ২০২০ সালে মৃত্যু ১৫৪ এবং আহত ৩৮৬, ২০১৯ সালে মৃত্যু ১৮৫ এবং আহত ৫৮৬, ২০১৮ সালে মৃত্যু ১৩০ এবং আহত ৬৭৭ এবং ২০১৭ সালে ৪৫ জনের মৃত্যু এবং আহত হন ২৮৪ জন। এদিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর অগ্নিকা-ে গড়ে ক্ষয়ক্ষতি ২২১ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার ৫৬৬ টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) ছোট-বড় ১০ হাজার ৯৯৯টি অগ্নিকা-ের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২১ কোটি ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকা। বিগত বছরগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২১ সালে ২১ হাজার ৬০১টি অগ্নিকা-ে ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকা-ে ২৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪ টাকা, ২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকা-ে ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৪, ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকা-ে ৩৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৫ এবং ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নিকা-ের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৬ টাকা। তবে বছরজুড়ে এসব অগ্নিকা-ের অর্ধেকের বেশি ঘটনায়ই কোনো অপারেশনে যেতে হয়নি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদস্যদের। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এসব অগ্নিকা-ে প্রতি বছর গড়ে দুই শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। পরিবার-পরিজন হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। আহত ব্যক্তিদের অনেকের জীবনযাপন হয়ে ওঠে মানবেতর। জানা যায়, দেশে ৮০ শতাংশ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বড় বড় অগ্নিকা-ের ঘটনার ধরন ও তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেশিরভাগ অগ্নিকা-ের কারণই বৈদ্যুতিক গোলযোগ। অর্থাৎ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে সহজেই শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। আবাসিক ভবন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও এখন আগুন লাগার প্রধান কারণ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার। এ ছাড়া আগুন লাগার আরেকটি বড় কারণ বিড়ি-সিগারেট ও রান্নার চুলা। গত পাঁচ বছরের অগ্নিকা- নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে অগ্নিকা-ের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। বছরে গড়ে ৩৮ শতাংশ অগ্নিকা- ঘটে শর্টসার্কিটের কারণে। এরপরই রয়েছে রান্নার চুলা। বছরে গড়ে ১৯ শতাংশ অগ্নিকা-ের কারণ চুলার জ¦লন্ত টুকরো অংশ। ২০২১ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, রান্নার চুলা থেকে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, বিড়ি-সিগারেটের জ¦লন্ত টুকরা থেকে ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালেও সবচেয়ে বেশি অগ্নিকা- ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, রান্নার চুলা ও বিড়ি-সিগারেটের জ¦লন্ত টুকরা থেকেই। আগের দু’বছর অর্থাৎ ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৩৯ শতাংশ, রান্নার চুলা থেকে ১৮ এবং বিড়ি-সিগারেটের জ¦লন্ত টুকরা থেকে ১৫ শতাংশ অগ্নিকা- ঘটে। ২০১৭ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৩৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রান্নার চুলা থেকে ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং বিড়ি-সিগারেটের জ¦লন্ত টুকরা থেকে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ অগ্নিকা- ঘটে। এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) না মানা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিস্ফোরক কেমিক্যাল ব্যবসা পরিচালনা, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও সঠিক তদারকি না করা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ব্যর্থতা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা- ঘটেই চলছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অগ্নি প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন সক্ষমতা বাড়ানোর কথা। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দেশে যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে সেখানে কেমিক্যাল মজুত বা ব্যবসার জন্য আলাদা ক্ষেত্র তৈরি করা কঠোর নজরদারির পাশাপাশি বাজার কিংবা উৎপাদনশীল কোনো জায়গায় আগুন লাগার কারণ বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা। আগুন লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয়, এ বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করা উচিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অগ্নিকা- প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।