ঢাকা ১২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

বাগেরহাটে বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে খানজাহান আলী বিমানবন্দর এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরসহ সব উপজেলায় চলছে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। অভিযান চালিয়ে, মামলা করেও বালু খেকোদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। জেলার নয়টি উপজেলায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কড়া নজরে রাখলেও বালু খেকোরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার খানজাহান আলী বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নির্মাণাধীন খান জাহান আলী বিমানবন্দরসহ এই জনপদের অধিকাংশ এলাকাই এখন হুমকির মুখে। আর এই বালু উত্তোলন করে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জেলার সব উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশ দিয়ে বালু নেওয়ার অসংখ্য পাইপ দেখা যায়। অনেকের অভিযোগ, এভাবে প্রকাশ্যে পাইপ দিয়ে বালি নিলেও তা প্রশাসনের কর্তাদের চোখে পড়েনা। রামপাল উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের সোনাতুনিয়া চন্দ্র মহলের উত্তর পাশ গোলবুনিয়া নামক একটি খালে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে, মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আশপাশের বিভিন্ন নিচু জমি, ডোবা, পুকুর, নালা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরের চারপাশ ভরাট করা হচ্ছে। দূরত্ব ভেদে উত্তোলন করা প্রতি ঘনফুট বালু ৬ টাকা থেকে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু রামপাল এলাকা নয় জেলার সকল উপজেলায়ই চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কেউ নিজের জায়গা থেকে উত্তোলন করে ভরাট করছেন নিজের জায়গা। আবার কেউ সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মহলের সুবিধা নিয়ে চালাচ্ছেন এ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজ। সচেতন মহলের ধারণা, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে খান জাহান আলী বিমানবন্দরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে। রামপাল এলাকার এনামুল হাসান নামের এক ইউপি সদস্য বলেন, বিমানবন্দরে মাটি ভরাটের জন্য ভোলা নদী ও তার আশপাশ ব্যক্তিগত জমিতে পাশাপাশি ছয়টির মতো ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রামপাল সদরের সিকি এলাকার বাসিন্দা কথিত ঠিকাদার মো. ফরিদ সেখ এর তত্ত্বাবধায়নে ওই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ৪/৫ টি গ্রামের মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্য রয়েছে। এসব এলাকায় ভূমিকম্প হলে বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বিমানবন্দরের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উজড়কুড় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন (জেড) বলেন, আমার জানা মতে সরকারি ভাবে প্রতি ঘনফুট মোটা দানার বালু ২৬ টাকায় কেনা তা দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে। তা না করে সরকারি নদী-খাল ও ব্যক্তিগত জমি থেকে ঠিকাদার ফরিদকে দিয়ে মাত্র ৬ টাকায় প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। প্রতি ঘনফুট বালুতে ২১ টাকা মুনাফা নিচ্ছে ফরিদ। নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানা হয়েছে। সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ সালাইদ্দিন বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে ভোলা নদী ও আশপাশ এলাকায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় ৪/৫ টি ড্রেজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আবারো অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিফুট বালু ৬ টাকায় উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বালু উত্তোলন করতে বলছে। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, একটি পক্ষ জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে এমন মিথ্যা কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছিল। খবর পেয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন কোথাও উত্তোলন হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ভূতলের বালু-মাটি উত্তোলন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠের ধস হতে পারে। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ অবৈধ কর্মকা- জরুরিভাবে প্রতিরোধ করা দরকার। এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, রামপালে কোনো বালু মহল নেই। কোনো ইজারাও হয়নি। কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। আপনারা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তথ্য দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে কৃষকের লোকসানের শঙ্কা বাড়ছে

বাগেরহাটে বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে খানজাহান আলী বিমানবন্দর এলাকা

আপডেট সময়ঃ ০৯:১০:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরসহ সব উপজেলায় চলছে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। অভিযান চালিয়ে, মামলা করেও বালু খেকোদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। জেলার নয়টি উপজেলায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কড়া নজরে রাখলেও বালু খেকোরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার খানজাহান আলী বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নির্মাণাধীন খান জাহান আলী বিমানবন্দরসহ এই জনপদের অধিকাংশ এলাকাই এখন হুমকির মুখে। আর এই বালু উত্তোলন করে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জেলার সব উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশ দিয়ে বালু নেওয়ার অসংখ্য পাইপ দেখা যায়। অনেকের অভিযোগ, এভাবে প্রকাশ্যে পাইপ দিয়ে বালি নিলেও তা প্রশাসনের কর্তাদের চোখে পড়েনা। রামপাল উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের সোনাতুনিয়া চন্দ্র মহলের উত্তর পাশ গোলবুনিয়া নামক একটি খালে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে, মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আশপাশের বিভিন্ন নিচু জমি, ডোবা, পুকুর, নালা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরের চারপাশ ভরাট করা হচ্ছে। দূরত্ব ভেদে উত্তোলন করা প্রতি ঘনফুট বালু ৬ টাকা থেকে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু রামপাল এলাকা নয় জেলার সকল উপজেলায়ই চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কেউ নিজের জায়গা থেকে উত্তোলন করে ভরাট করছেন নিজের জায়গা। আবার কেউ সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মহলের সুবিধা নিয়ে চালাচ্ছেন এ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজ। সচেতন মহলের ধারণা, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে খান জাহান আলী বিমানবন্দরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা চরম হুমকির মধ্যে পড়বে। রামপাল এলাকার এনামুল হাসান নামের এক ইউপি সদস্য বলেন, বিমানবন্দরে মাটি ভরাটের জন্য ভোলা নদী ও তার আশপাশ ব্যক্তিগত জমিতে পাশাপাশি ছয়টির মতো ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রামপাল সদরের সিকি এলাকার বাসিন্দা কথিত ঠিকাদার মো. ফরিদ সেখ এর তত্ত্বাবধায়নে ওই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ৪/৫ টি গ্রামের মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্য রয়েছে। এসব এলাকায় ভূমিকম্প হলে বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বিমানবন্দরের ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। উজড়কুড় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন (জেড) বলেন, আমার জানা মতে সরকারি ভাবে প্রতি ঘনফুট মোটা দানার বালু ২৬ টাকায় কেনা তা দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে। তা না করে সরকারি নদী-খাল ও ব্যক্তিগত জমি থেকে ঠিকাদার ফরিদকে দিয়ে মাত্র ৬ টাকায় প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। প্রতি ঘনফুট বালুতে ২১ টাকা মুনাফা নিচ্ছে ফরিদ। নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানা হয়েছে। সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ সালাইদ্দিন বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে ভোলা নদী ও আশপাশ এলাকায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় ৪/৫ টি ড্রেজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আবারো অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিফুট বালু ৬ টাকায় উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বালু উত্তোলন করতে বলছে। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, একটি পক্ষ জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে এমন মিথ্যা কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছিল। খবর পেয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন কোথাও উত্তোলন হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ভূতলের বালু-মাটি উত্তোলন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠের ধস হতে পারে। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ অবৈধ কর্মকা- জরুরিভাবে প্রতিরোধ করা দরকার। এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, রামপালে কোনো বালু মহল নেই। কোনো ইজারাও হয়নি। কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। আপনারা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তথ্য দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।