নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজারে চাহিদা থাকলেও ইয়ার্ডগুলো পর্যাপ্ত স্ক্র্যাপ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে বেড়ে গেছে স্ক্র্যাপের দাম। মূলত স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে টনপ্রতি স্ক্র্যাপ ৬০-৬২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে স্ক্র্যাপ সরবরাহে আরো বড় সংকট তৈরির শঙ্কা রয়েছে। ফলে টনপ্রতি স্ক্র্যাপের দাম আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট ২৮০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছিল। যার সম্মিলিত ওজন ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৭ টন। আর চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে মাত্র ৯৩টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয়েছে। যার মোট ওজন ৭ লাখ ৬৯ হাজার ২১৫ টন। অথচ গত বছরের প্রথম ৭ মাসেই ১৭১টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করা হয়েছিল। যার ওজন ছিল ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টন। বছরের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ৭৮টি এবং ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৫ টন।
সূত্র জানায়, দেশের বাজারে ডলারের মাত্রাতিরিক্ত সঙ্কটের পাশাপাশি বড় অংকের এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং বাড়িয়েছে। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। সরকার যদি আরো কয়েক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে তাহলে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তখন অনেক ইয়ার্ডই বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে ৫০ লাখ ডলারের বেশি অর্থমূল্যের এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হচ্ছে। ফলে বড় সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কারণ একেকটি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে দেড়শ থেকে ২শ’ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু আমদানিকারকরা এখন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছে না। ফলে গত মাস থেকেই তলানিতে নেমেছে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি। আর আগামী মাসগুলোয় এলসি জটিলতার সমাধান না হলে শিপইয়ার্ডগুলো একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ডলার সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যে দেশের ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প খাতে অনেকটাই স্থবিরতা বিরাজ করছে। এলসি-সংক্রান্ত জটিলতায় গত জুলাইয়ে মাত্র ৮টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদা থাকলেও স্ক্র্যাপ সরবরাহ করতে পারছে না ইয়ার্ডগুলো। আর গত দু-তিন মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক ইয়ার্ডেই বেতন-ভাতা নিয়ে বড় সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় এখন বন্ধের পথে অনেক ইয়ার্ড।
এদিকে জাহাজ ভাঙা শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কিন্তু বর্তমানে দেশের বাজারে ইস্পাত খাতের চাহিদা বাড়লেও ইয়ার্ড থেকে স্ক্র্যাপের জোগান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের প্রতি মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বাড়লেও চলতি বছরের শুরু থেকেই নিম্নমুখী ওই হার।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে ব্যাংকে এলসি করতে গেলে ব্যাংকগুলো ডলার দিতে পারছে না। ফলে জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। চলতি মাসে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিয়েও ইয়ার্ডগুলোয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে।