নিজস্ব প্রতিবেদক :
জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বিইআরসির নির্ধারিত দামে বাজারে মিলছে না এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিইআরসি এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বরং স্থানভেদে ২০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসের জন্য এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের নির্ধারিত দর ১ হাজার ২২৮ টাকা। কিন্তু গ্রাহককে তা সর্বোচ্চ ১৩৫০ টাকায় কিনছে হচ্ছে। এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতাদের মতে, ডিলারদের কাছ থেকে যে দামে কেনা হয় তার সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করে সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করা সম্ভব হয় না। মূলত টিকে থাকতেই খুচরা ব্যবসায়ীরা এলপিজির দাম বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমানো হলে নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি সম্ভব নয়। বিইআরসি এবং এলপিজি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বলছে, দেশজুড়ে বাজার তদারকির মতো জনবল বিইআরসির নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিইআরসি অভিযান চালাতে পারে। আদালতের নির্দেশনায় সাম্প্রতিককালে প্রতি মাসেই আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে বিইআরসি এলপিজির দাম সমন্বয় করে আসছে। কারণ লোকসানের অজুহাতে বিক্রেতারা নিজেদের মতো করেই এলপি গ্যাস বিক্রি করছিল। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে নতুন করে আবার গণশুনানি হয়। তারপর অক্টোবরে এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করে কমিশন বিইআরসি। যা বাজারের প্রচলিত দরের চেয়ে বেশি। তাতে ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ভোগান্তিতে পড়ে ক্রেতারা। সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর চলতি ডিসেম্বর মাসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি এলপিজি ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০২ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করে বিইআরসি। ফলে বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ১২ কেজির সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এক হাজার ৩১৩ টাকা থেকে কমে হয় ১ হাজার ২২৮ টাকা। আর ওই দর ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। কিন্তু বান্তব চিত্র ভিন্ন।
সূত্র জানায়, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো প্রতি মাসে এলপিজির ওই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে। যা সৌদি কার্গোমূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে বিইআরসি দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে। সরকারি একটি কোম্পানিসহ বর্তমানে দেশে এলপিজি আমদানি, মজুদ, বিতরণের সঙ্গে ২৯টি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে। দেশে বার্ষিক এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ ১০ লাখ টন আর তার ৯৮ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসে। ৩৮ লাখ গ্রাহকের জন্য সারাদেশে ৩ হাজার পরিবেশক ও ৩৮ হাজার খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
এদিকে চলতি মাসের দাম ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেছিলেন, এখন বিইআরসির নির্ধারিত দামে দেশের সব জায়গায় এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। তবে কোথাও থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহী জানান, বিইআরসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের বাজার তদারকির জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। কারণ পুরো দেশ দেখার মতো জনবল কমিশনের নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।