নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদ্যমান আইনে পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা নেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আইন সংশোধন হলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ গুম-খুনের ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জাতীয় তদন্ত (ন্যাশনাল ইনকোয়ারি) কমিটি গঠন করা হবে। আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। বর্তমান কমিশনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) র্যাবের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিতে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, বিদ্যমান আইনে গুম-খুনের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তদন্ত করার ক্ষমতা নেই। তাই আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। আইন সংশোধন প্রস্তাব জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে তোলা হতে পারে। আইন সংশোধন হলে জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে নাছিমা বেগম বলেন, করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে দেশের ৬৪টি জেলার ডেপুটি কমিশনারকে মানবাধিকারসংক্রান্ত জেলাভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি জেলা পর্যায়ে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করবে। একইভাবে গুম-খুনের বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশন চেয়ারম্যান সুনির্দিষ্ট কিছু না জানালেও কমিশনের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার কমিশন কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সমর্থন করে না। তবে অতীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তেমনটি আছে কি না- তা দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া বিস্তারিত প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি। আমরা এ বিষয়ে ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের চিঠির অপেক্ষায় আছি। চিঠি পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানানো হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘কমিশন ঘুমিয়ে থাকে’-এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন কমিশন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, পুলিশ সার্জেন্টের পিতাকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনায় মামলা নেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ সেই মামলা নিয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছে কমিশন। রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় মালিক-ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্বে বিদ্যুৎ-পানির সংকটে ছিল একটি পরিবার। কমিশনের উদ্যোগের ফলে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে খাদিজা নামের এক নারীকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এনে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বেশ কিছু সাফল্যের কথা ধরেন তিনি। কমিশন চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেন, আগের কমিশনের থেকে বর্তমান কমিশন কর্মে বেশি তৎপর। আইন মেনেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে এই কমিশন। কমিশনের কাজগুলোকে ডিজিটালি করার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এখন অনলাইনে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে ভুক্তভোগী নিজে বা প্রতিনিধি। সে জন্য এনআইডি বা মোবাইল নাম্বার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত দুই বছরে কমিশনের কাছে আসা ৮২ ভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমান কমিশন কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করেন তিনি।