• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

বিশ্ব অর্থনীতির রূপরেখা পাল্টে যাচ্ছে

Reporter Name / ১৩৩ Time View
Update : রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারীর করাল থাবায় বিশ্ব অর্থনীতির দশা টালমাটাল। এই করুণ দশা কেটে ওঠার জন্য বিশ্বব্যাপী চলছে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের দেশের একটি নিবিড় সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার বড় উৎস। তা ছাড়া আমরা প্রচুর পরিমাণে পণ্য আমদানি করি। পণ্য রপ্তানির বিষয়ও আছে। ফলে করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রনের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়লে সেটি বাংলাদেশেও আসবে।
এটি সন্তোষজনক বিষয় যে, ২০২০ সালে ভয়াবহ মন্দার পরও বিদায়ী বছরে সম্ভাবনার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং জোরালোভাবে বাজারগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এটা আংশিকভাবে সম্ভব হয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের অতি শিথিল মুদ্রানীতির কারণে। বাংলাদেশও খুব একটা ধাক্কা লাগেনি। করোনার ওই কঠিন মুহূর্তেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখ করার মতো।
ধারণা করা হয়েছিলন ২০২১ এর শেষে কিংবা ২০২২ সালের শুরুতে বিশ্বে স্বস্তি ফিরবে। বিশ্ববাসী করোনার ছোবল থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পুরো উল্টো। করোনা তার নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। তাই নবাগত ২০২২ সালটা মনে হয় আরেকটু কঠিন হতে যাচ্ছে। আগের ধরনগুলোর চেয়ে ওমিক্রন ততটা বিপর্যয়কর না-ও হতে পারে, বিশেষ করে টিকাদানে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশগুলোর জন্য; কিন্তু এটি আরো বেশি সংক্রামক, যার মানে হলো হাসপাতালে রোগীর চাপ এবং মৃত্যু বেশি হবে। ওমিক্রন-সৃষ্ট অনিশ্চয়তা-ঝুঁকি চাহিদা দমন করবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাগুলো আরো তীব্রতর করবে।
এর ফলে বিশ্ব ভুগবে আরও নানামুখী সমস্যায়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হাঁসফাঁস খাওয়া বিশ্ব আবার ব্যাপক চাপে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। বাড়তি সঞ্চয়, দমিত চাহিদা, শিথিল মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সঙ্গে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতাগুলো ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকারই জোরগলায় বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতা হবে সাময়িক। তারা এখন স্বীকার করছেন, এ স্ফীতি আগামীতেও বজায় থাকবে। জরুরি পদক্ষেপে মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও তারা এখন মাত্রিক উপশমের (কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং) মতো অগতানুগতিক মুদ্রানীতিগুলো ধীরে ধীরে অবসায়নের পরিকল্পনা করছেন, সুদহার যাতে কিছুটা স্বাভাবিক করা যায়।
করোনা মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে এখন নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। চীন এখানে বড় একটি ফ্যাক্টর। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে, সেটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ধারণা করা হচ্ছে করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির একটা পুনর্গঠন হবে। বর্তমানে যেভাবে বিশ্বায়নের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে, সেটি না-ও হতে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি যেভাবে পরিবর্তিত হবে, সেটির সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশকে যে প্রস্তুত থাকতে হবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
করোনা পরবর্তী অর্থনীতির রূপরেখা হবে আরও ভিন্ন। বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে কেবল তৈরি পোশাক রপ্তানি দিয়ে আর এগোনো যাবে না। এটি আর আগের মতো আকর্ষণীয় থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে পণ্য বহুমুখীকরণে যেতে হবে। করোনা-পরবর্তী বিশ্বে নতুন নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সে পথে হাঁটবে। তাতে আমরা বিশ্বায়নের পথে যতটুকু এগিয়েছিলাম, সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। করোনা-পরবর্তী সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অভিমত খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে জোর দিতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য নির্মাণ খাতের ওপর ভরসা করতে হবে। এই খাতের সম্ভাবনা অনেক বড়। নির্মাণ খাত গরিব মানুষের জন্য দ্রুত উপার্জনের উপায় হতে পারে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি এখানে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই জায়গায় জোর না দিলে অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারবে না। কারণ, প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকি হলে সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। তখন অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যেতে পারবে না। তবে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আন্তরিক হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব।
অর্থনৈতিক ধাক্কার পাশাপাশি নতুন বছরে আরও যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করতে পারে তা হলো জলবায়ু সমস্যা। ২০২১ সালে দাবদাহ, অগ্নিকা-, খরা, হারিকেন, বন্যা, টাইফুন এবং অন্য দুর্যোগগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত প্রভাব অনেকটা উন্মোচন করেছে। আর এদিকে গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু গালভরা প্রতিশ্রুতি উপহার দিয়েছে চলতি শতকে বৈশ্বিক উষ্ণতা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বিশ্বকে ঠেলে দিয়ে। খরা এরইমধ্যে খাদ্যের দাম বিপজ্জনক মাত্রায় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। সামনে আরো খারাপ হতে পারে।
বায়ুম-লে গ্রিন হাউজ গ্যাসের অতিমাত্রায় বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে ক্ষতিকর কার্বনের বৃদ্ধিতে পুরা বিশ্ব এখন শঙ্কিত। জানা যায়, দেশে দেশে অর্থনীতিকে বি-কার্বনায়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটা আলাপ চলছে। তবে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতের আগে আগ্রাসীভাবে সেদিকে নিয়ে যাওয়াটা জীবাশ্ম জ¦ালানি সক্ষমতায় বিনিয়োগ নিঃশেষিত করে পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে পারে। সময়ান্তরে এ ডিনামিক্স জ¦ালানির দাম আরো বাড়াতে পারে। অধিকন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্য উন্নত দেশগুলোর শরণার্থীর প্রবাহ বাড়বে, যেহেতু দেশগুলো তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
এ প্রেক্ষাপটের বিপরীতে উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি উভয় ধরনের দেশগুলোয় রাজনৈতিক অকার্যকারিতা (পলিটিক্যাল ডিসফাংশন) বাড়ছে। মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন একটি পূর্ণ প্রস্ফুটিত সাংবিধানিক সংকট উপহার দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দলীয় মেরুকরণ, অচলাবস্থা ও রক্ষণশীলতার নজিরবিহীন মাত্রার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার সবগুলোয় সাংঘাতিক পদ্ধতিগত ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
এটি স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী হচ্ছে দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী উভয়ই। এমনকি লাতিন আমেরিকারের মতো অঞ্চলেওÑযেখানে রাজনৈতিক জনতুষ্টিবাদ একটা বিপর্যয়কর ইতিহাসের রূপ নিয়েছে। পেরু ও চিলি উভয় দেশেই বিদায়ী বছরে কট্টর বামপন্থী নেতারা বিজয়ী হয়েছেন। ২০২২ সালে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ায়ও তেমনটা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার আর্জেন্টিনা ও ভেনিজুয়েলায় আর্থিক পতনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ফেডারেল রিজার্ভ ও অন্য প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর গৃহীত নীতি সুদহার স্বাভাবিকীকরণের পদক্ষেপে ওইসব দেশ এবং তুরস্ক ও লেবাননের মতো নাজুক উদীয়মান বাজারগুলোয় আর্থিক অভিঘাত ঘটাতে পারে। উল্লেখ করার দরকার নেই যে বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশই ঋণ ফাঁদে পড়বে, যাদের ঋণ অনুপাত এরইমধ্যে অস্থায়িত্বশীল।
তবে বাংলাদেশের জন্য আশার বানী শুনাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যেভাবে চলছে এভাবে চলতে থাকলে দেশটি আগামীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category