নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিড়াল দিয়ে পরীক্ষা করে গাজীপুরে প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকুর বগারটেক এলাকা থেকে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় নিহতদের মুখ দিয়ে সামান্য লালা বের হচ্ছিল। এ ছাড়া তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। বিভিন্ন স্থান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখে এবং বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত করেও শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। মৃত্যুর দুই মাস পর শিক্ষক দম্পতির ব্যবহৃত ওই গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০-১২ মিনিট পর বিড়ালটি দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়তে থাকে। পরে ২৫-২৬ মিনিট পর বিড়ালটি মারা যায়। শিক্ষক দম্পতির স্কুল থেকে তাদের লাশ উদ্ধারের স্থান খাইলকুর বগারটেক এলাকা অনুমানিক ২৫-২৬ মিনিটের দূরত্ব। এ পরীক্ষা থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু গাড়ির বিষাক্ত গ্যাস থেকেই হয়েছে। প্রায় আড়াই মাস ধরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি ও র্যাব-১ সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে আসছেন। গাড়ি ও গাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদির উজ্জ-জামান বলেন, বিড়াল দিয়ে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু তাদের ব্যবহৃত গাড়ির বিষাক্ত গ্যাস থেকেই হয়েছে। জব্দ করা আলমতের পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিহত শিক্ষক দম্পতি গাজীপুর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কামাড়জুরী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। চলতি বছরে গত ১৭ আগস্ট স্কুলে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি তারা। পরের দিন ভোরে তাদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার আড়াই মাস হয়ে গেলেও ঘটনার ক্লু খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। এখন পর্যন্ত নিহতের ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন জানান, এখন পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। যার কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস সময় লাগে।