• সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ বাড়লেও গ্রাহকরা যথাসময়ে তা পরিশোধ করতে পারছে না

Reporter Name / ২১৭ Time View
Update : শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বেসরকারি পর্যায়ে বিদেশী ঋণের পরিমাণ। আর যথাসময়ে ওসব ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় তা চলে যাচ্ছে খেলাপির খাতায়। গত ডিসেম্বর শেষে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ওই ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৮১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ৫ বছর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ১০৮ ভাগ। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে গত ২ বছর স্বাভাবিক বিনিয়োগের গতি মন্থর হয়ে যায়। ওই সময় বড় অঙ্কের প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করা হয়। এক বছরে প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ করা হয়। সরকার ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ ও মুনাফার ওপর ভর্তুকি দেয়। উদ্যোক্তারা ওই খাত থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশে সুদে ঋণ পায়। কিন্তু তারপরও বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে কর্মরত ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টি ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা কোনো বিদেশী ঋণ নেয়নি। ৪৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে গত ডিসেম্বর শেষে ৮১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা বিদেশী ঋণ এসেছে। তার মধ্যে এক হাজার ১০৯ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। অর্থাৎ গ্রাহকরা সময় মতো বিদেশী ওসব ঋণ পরিশোধ করেনি। আর খেলাপি হওয়ায় ওসব ঋণ পরিচর্চা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বিগত ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ওবিইউর মাধ্যমে বিদেশী ঋণ এসেছিল ৩৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। আর ৫ বছরের ব্যবধানে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ১০৮ শতাংশ। বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তার বিপরীতে নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে দেশের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রায় সুদ চলে যাচ্ছে। ওই কারণে দেশের আমানতকারীসহ সাধারণ গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশ দু’ধরনের সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে। প্রথমত, চলমান পরিস্থিতিতে বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ করতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু বিনিয়োগ চাহিদা আরো বাড়লে তখন বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বেড়ে যাবে। আর আজকে যে বিদেশী ঋণ নেয়া হচ্ছে তাও একসময় সুদে আসলে পরিশোধ করতে হবে। একদিকে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়বে, পাশাপাশি বিদেশী ঋণের সুদসহ আসল পরিশোধ করতে চাপে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তখন আজকে যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে ৮৬ টাকায়, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওই ডলার কিনতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হলে বিদেশী ঋণের প্রকৃত সুদও বেড়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, গত দুই বছরের করোনা ভাইরাসের ধকলের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোর অনেকেই শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। সব মিলে ব্যাংকে আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। একদিকে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ছে, অপরদিকে কমছে আমানতপ্রবাহ। পাশাপাশি রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার ধারাও অব্যাহত রয়েছে। ফলে ব্যাংকের পণ্য আমদানির দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। সব মিলেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ রয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে বিদেশী ঋণ সুদে আসলে পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ের নামে দেদার বিদেশী তহবিল আনছে। আগে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ কয়েকটি খাতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তহবিল জোগান দেয়ার সুযোগ ছিল। এখন সার, আলু বীজসহ আরো কয়েকটি খাতে ওই তহবিল আনার সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ব্যাংকের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ আরোপের অনুমোদন দেয়া আছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ নেয়া বা দেয়ার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা দেয়া নেই। ওই সুযোগে কিছুকিছু ব্যাংক দেদার বিদেশী ঋণ আনছে। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সুদে আসলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা হচ্ছে। ৩ মাস থেকে ৫ বছর মেয়াদে ওই ধরনের ঋণ নেয়া হচ্ছে।
ব্যাংকারদের মতে, বৈদেশিক ঋণের হ্রাস এখনই টেনে ধরতে হবে। বৈদেশিক দায় আরো বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেচাপ বেড়ে যাবে। কারণ আয় আমদানির দায় মেটাতে প্রতি মাসেই ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়। তার সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণের দায় মেটাতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবল চাপের মুখে পড়ে যাবে। আর একসময় এর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। তখন দেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category