নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে কর্মরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা নানা অনিয়মে লিপ্ত। তাদের অনেকেই নানা অবৈধ উপায়ে প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নিচ্ছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক হলেও দিনে দিনে ট্রাস্টিদের কাছে লোভনীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। যদিও আইন অনুযায়ী ট্রাস্টিরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের জোগানদাতা হওয়ার কথা এবং তার বিপরীতে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেয়ার সুযোগ তাদের নেই। এমনকি স্বার্থের সংঘাত এড়াতে ট্রাস্টি কিংবা তাদের পরিবারিক অংশীদারত্ব থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু অনেক ট্রাস্টি সদস্যই তার তোয়াক্কা করছে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে (বিওটি) সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিওটির দায়িত্ব নীতি প্রণয়ন ও অনুমোদনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যারয়ের সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে খোদ ট্রাস্টিরাই। ট্রাস্টিরা বনে যাচ্ছেন অর্থ লোপাটকারী। ট্রাস্টিদের অনিয়মের শিকার হয়ে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত যেসব তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তার প্রায় সবক’টিতেই সংশ্লিষ্ট বিওটি সদস্যদের নানা অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। জমি কেনার নামে মোটা অংকের অর্থ লোপাট, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ট্রাস্টিদের নিজেদের নামে কেনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব অবৈধভাবে নিজেদের স্বাক্ষরে পরিচালনা, সিটিং অ্যালাউন্স ও ভ্রমণের নামে অননুমোদিত ভাতা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে অবৈধভাবে অর্থ সরিয়ে নেয়া ও ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশে পাচার, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির টাকা দিয়ে নিজেদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, এমনকি ব্যক্তিগত কর পরিশোধসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে দেশের বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা। বিগত ২০১০ সালে যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যখন সংশোধন করা হয় তখন ৫ কোটি টাকার এফডিআরের শর্ত দেয়া হয়। ফলে শিক্ষা খাতে শিক্ষাবিদদের তুলনায় ব্যবসায়ীরা উদ্যোক্তা হতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করতে শুরু করে। বৈধ উপায় না পেয়ে জমি কেনা, গাড়ি কেনা, নামে-বেনামে ভাতাসহ নানা উপায়ে সুযোগ-সুবিধা নিতে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, গত এক দশকে ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কয়েক ডজন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পরিচালিত তদন্তের প্রায় সবক’টিতেই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) ও বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ বিষয়ে কমিশনের তদন্ত চলমান।
এদিকে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর এ বিষয়ে জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট অ্যাক্ট উভয় আইনের আলোকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই দর্শন না বুঝে যারা বিনিয়োগ করেছে তারাই লাভ খুঁজছে। তারা নানা উপায়ে সুবিধা নিচ্ছে।