• শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর বর্হিবিশ্বে পুরোদমে শুরু হয়েছে জনশক্তি রফতানি

Reporter Name / ২৩৪ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর বর্হিবিশ্বে জনশক্তি রফতানি পুরোদমে শুরু হয়েছে। করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। আর জনশক্তি রফতানিতে গতি বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলোও বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। দীর্ঘদিন পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিজিট ভিসার পাশাপাশি এমপ্লমেন্ট ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে। ফলে আগামী বছর জনশক্তি রফতানিতে রেকর্ড পরিমাণ সাফল্য অর্জিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। আর রেমিট্যান্স আয়ের ওপর ভর করেই সচল রয়েছে দেশের জাতীয় অর্থনীতির চাকা। জনশক্তি রফতানি খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৪৪ জন নারী-পুরুষ কর্মী। তার মধ্যে অক্টোবর মাসেই সৌদিতে গেছে ৫১ হাজার ৪২৫ জন। একই মাসে ওমানে চাকরি নিয়ে গেছে ৫ হাজার ১০১ জন কর্মী। আর প্রবাসী কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সৌদি নিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে প্রচুর কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ইস্যু করছে। ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ গত দু’সপ্তাহ প্রচুর ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করছে। দূতাবাস থেকে প্রতিদিন কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি ৩০ থেকে ৪০টি ওয়ার্ক ভিসা হাতে পেয়েছিল। আগে দূতাবাসে ৩০টি পাসপোর্ট জমা দিলে মাত্র ১০ থেকে ১১টি ভিসা মিলতো।
সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির পর ইউরোপের দেশগুলোতেও নতুনভাবে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি রোমানিয়া সফল শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন ওই দেশটিতে ৪০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী যাবে। সরকার সম্ভাবনাময় নতুন ওই শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায়। ইতোমধ্যে স্বল্প খরচে খুব সহজেই কাজের ভিসা নিয়ে ওই দেশটিতে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন বাংলাদেশী কর্মীরা। তাতে ইউরোপের শ্রমবাজারে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও বেশ কিছু জনশক্তি রফতানিকারক ইউরোপের শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৫ বছর পর ইতালিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। করোনা মহামারি কমে আসায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ইউরোপের রুমানিয়া, হাঙ্গেরী, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিকান ও সার্বিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মূলত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ রোমানিয়ার জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিতে অর্ধশত শ্রমিক যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী সময়ে আরো বেশকিছু কর্মী জাহাজ, ইমরাত নির্মাণ ও গার্মেন্ট কোম্পানিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শ্রমবাজারের সম্ভাবনাময় দেশ ব্রুনাইয়েও প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। করোনার কারণে বিগত দু’বছর যাবত অভিবাসী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় দেশটিতে কর্মী সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে। ব্রুনাই সরকার বাংলাদেশ থেকে বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মী নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে কর্মী নিয়োগের আগে দেশটির সরকার দালাল চক্রের প্রতারণা বন্ধ এবং বৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করতে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে। আর কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে চিহ্নিত দালাল চক্রের উপদ্রব বন্ধ হবে এবং হাইকমিশনের সত্যায়নের ভিত্তিতে দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব অনেক। করোনাকালেও প্রবাসী আয়ে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। সচল রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের স্থবির অর্থনীতিতে শক্তি যুগিয়েছিল। কিন্তু চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে হঠাৎ করেই প্রবাসী আয়ে ধীরগতি নেমে আসে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমতে শুরু করে। সদ্যবিদায়ী অক্টোবর মাসেও রেমিট্যান্স আয়ে ধীরগতি অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবরে দেশে ১৬৫ কোটি ডলারেরও কম রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। তারপর থেকে আর এত কম রেমিট্যান্স আসেনি। রেমিট্যান্সের ওই প্রবাহ গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। মূলত করোনাকালে প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়াসহ বেশকিছু কারণে রেমিট্যান্স কমেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছে। তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় ফের হুন্ডি প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে গেছে প্রবাসী আয়।
এদিকে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান জানান, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ভ্রাতৃপ্রতীম সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ২৫ শতাংশ কোটা বর্তমানে ৪০ শতাংশ উন্নতি করেছে। তাতে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ইস্যুর পরিমাণ রাতারাতি বাড়ছে। প্রায় দু’হাজার রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ৭শ’ এজেন্সি ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে তালিকাভুক্ত আছে। আর দ্বিতীয় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে ভিজিট ভিসার পাশাপাশি নতুনভাবে এমপ্লয়মেন্ট ভিসা চালু করেছে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিবের সত্যায়নের ভিত্তিতে ওই দু’ক্যাটাগরির ভিসার কর্মীরা সরকারি স্মার্টকার্ড নিয়েই চাকরি লাভ করছে।
অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি সম্প্রতি সংসদ ভবনের কেবিনেট কমিটি কক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৪তম সভায় জানান, বর্তমানে বিদেশে কর্মী গমনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট দেড় লাখেরও বেশি কর্মী কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র আসছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে এসেছে। এই প্রবাহ চলমান থাকলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আর বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমলেও খুব শিগগিরই তা ঊর্ধ্বমুখী হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category