• বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

ভারতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বের করে নিত একটি চক্র

Reporter Name / ৩৬ Time View
Update : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের দরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর দিল্লিতে নিয়ে জিম্মি করে ফেলে। পরে টাকার লোভসহ ভিন্ন কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০ জন ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ১১ মে ধানমন্ডির ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে এবং বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো- মো.রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরেফ মোস্তফা (৩৭)সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন। ধানমন্ডি থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সঙ্গবদ্ধ চক্রটি দেশের দরিদ্র মানুষকে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে নানান কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে যায়। পরে নানা কৌশলে তার কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করে। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বললেও দেয় ৩ লাখ টাকা। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পেছনে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে বসে দোকানে চা পান করছিল এবং সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। এ সময় পাশে বসা অভিযুক্ত পলাতক আসামি মাছুমও চা পান করছিল। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই বলে ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানে রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর তাদের নিয়মিত কথা হতো। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন। ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, পরবর্তীতে মাছুম রবিনকে বলে ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যায় মাছুম। সেখানে রবিনের সঙ্গে গ্রেপ্তার মো. রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে আসামিরা ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয় ভারতের ভিসার জন্য। ভিসা পাওয়ার পর রবিনকে মাছুম ও মো.রাজু হাওলাদার গ্রেপ্তার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার, বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথভাবে ব্যবসা করে বলে রবিনকে জানায় আসামিরা। পরবর্তীতে রবিনকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে পলাতক আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। তারা তাকে রিসিভ করে তার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে ফরিদাবাদ এলাকার নিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেন, ফরিদাবাদে রবিনকে আটক রাখা অবস্থায় মাছুম ও সাগর সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে রবিন তার চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বিভিন্ন রকম টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিরা রবিনের আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দূরাবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। তাকে ভয়ভীতি দেখায় যে, পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশেও ফিরে আসতে পারবে না। পরে তাকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে যায় এবং মুক্তিনগর এলাকায় দোতলা একটি বাসায় রাখে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে, ফুসলিয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে ভিকটিমের একটি কিডনি নিয়ে নেয়। অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়া পান রবিন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসামিরা তাকে ভারতের অজ্ঞাত স্থানে প্রায় ১০-১১ দিন আটকে রাখে। এদিকে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভিকটিম জানতে পারেন তার কিডনি আসামিরা দালালচক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে। এক পর্যায়ে দালালচক্র তাকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়। পরে দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন বড় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের টার্গেট যাদের আর্থিক চাহিদা আছে। রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে তাকে খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে। চক্রটি এসব কিডনি আরও চড়া দামে বিক্রি করে? আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি চক্রটি এখন পর্যন্ত ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ-ছয় জন ছিল বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, চক্রটি কিডনির বিনিময়ে রবিনকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা দেয়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাদের কিডনি নেওয়া হচ্ছে তাদের কিডনির গ্রহীতারাও বাংলাদেশি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category