• সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

মহাবিপদে মধ্যবিত্ত: বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না

Reporter Name / ২২২ Time View
Update : রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংকটকালে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারে না। অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না। মধ্যবিত্তের অবস্থান মাঝখানে। তাই না পারে নীচে নামতে, না পারে উপরে উঠতে। এই করোনাকালে তাই সে হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্ত।
মধ্যবিত্তের বাড়তি আয় নেই; অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বাসভাড়া লাগামহীন, ব্যাংক আমানতে সুদ কম, গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, ঘরে ঘরে বেকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধিতে জীবন এবং জীবিকায় এই শ্রেণির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনার দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা যখন এই শ্রেণির মানুষের ব্রত; তখন তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সবকিছুই লন্ডভন্ড। জীবনযুদ্ধে থাকা মানুষগুলোর জীবন বাঁচাতে জীবিকা রক্ষা কঠিন হয়ে গেছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জীবন যাত্রায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা কি করবেন, এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। যার জন্য নির্ধারিত মূল্যে পণ্য ক্রয়ের জন্য টিসিবির ট্রাকের সামনে কর্মজীবী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। নিরুপায় হয়েই তারা টিসিবির পণ্য কেনেন কষ্ট করে। এসব পণ্য বাজারে কেনার সামর্থ তাদের নেই।
করোনা মহামারীর কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন, অনেকের বেতন হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য উৎস থেকেও কমে গেছে আয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর জরিপে দেখা গেছে, করোনায় ফর্মাল সেক্টরে কাজ করা ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরি হরিয়েছেন। যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে। যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে। আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই জরিপে কিন্তু মধ্যবিত্তের ওপর করোনার অভিঘাত স্পষ্ট। জানা যায়, লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরিতে যারা নতুন আসেন, তাদের বেশিরভাগই এই মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। দীর্ঘ দেড় সরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের স্বপ্ন এতোদিন ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছিল। এখন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সব পরীক্ষা রাজধানীতে হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের অনেকেই নানা পন্থায় অর্থ সংগ্রহ করে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় এতেও পরিবারগুলোকে বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংসারের খরচ কমিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য মরিয়া মানুষগুলো সবকিছুই মূল্যবৃদ্ধিতে হতোদ্যম। এ অবস্থায় সিপিডি জ¦ালানির মূল্য আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ¦ালানির মূল্য নির্ধারণ করার মেকানিজমে বৈজ্ঞানিক কোনো মেথড মানা হয়নি। জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিত্তবানদের ওপর প্রভাব না পড়লেও মধ্যবিত্ত, দরিদ্র এবং যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, যারা করোনা আক্রান্ত অর্থনীতিতে নতুন করে রিকোভারির চেষ্টার মধ্যে রয়েছে, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, চাল, আটা, তেল, চিনি ও ডাল আগের মতোই বাড়তি দামে কেনাবেচা হচ্ছে। সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী। তেলের মূল্যবৃদ্ধির গরম বাজারে লাগায়- জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাধারণ মানুষের। তাদের আয় ও সঞ্চয়ে প্রভাব পড়েছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় বলতে এখন আর তেমন কিছুই নেই। দিন এনে দিন খেয়ে কাটছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের আরও চাপে ফেলেছে শীতকালীন সবজির বাড়তি দাম। উচ্চমূল্যে এসব সবজি কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। জানা যায়, শুক্রবার চিকন থেকে মোটা বিভিন্ন মানের চাল ৫৬ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা লিটার দরে। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৬ টাকা। মসুর ডালের কেজি ৯০ থেকে ১৩০ টাকা। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতোই ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-গোশত সবকিছুর দাম বেশি।
নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লাগার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। ডিজেল ও সিএনজি চালিত বাসে ‘স্টিকার লাগানো’ বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত, মালিক সমিতির নানান হুঁশিয়ারি, বাসে ভাড়ার চার্ট লাগানো কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। বাস মালিকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। বাসের ড্রাইভার, হেলপার, কন্ট্রাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়া, মারামারি হচ্ছে নিত্যদিন; কিন্তু যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া বেশি নেয়ার প্রবণতা কমছে না।
সরকার ডিজেলের মূল্য লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে মালিকদের চাহিদামতো পরিবহন ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সে নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। বিআরটিএ ঘোষিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। মালিকদের নির্দেশে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এতে মধ্যবিত্ত যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
গণপরিবহনে চলাচল করে সাধারণত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন পেশাজীবী এই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর যে সদস্যের রোজগারে সংসার চলে তাদের প্রতিদিন বাসা ও কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয় গণপরিবহনে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি রুটের বাস ভাড়া বেড়ে গেছে। ফলে মধ্যবৃত্তি পরিবারের কর্তারা বাড়তি চাপে পড়ে গেছেন। নিয়মিত অতিরিক্ত বাস ভাড়া দেয়া তাদের কাছে দায় হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাসে যাতায়াত করে দেখা গেছে সড়কে চলছে ভাড়া-নৈরাজ্য। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে। কিন্তু তারা নিরুপায়-জিম্মি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ (বিসিজি) ২০১৫ সালেই বাজার ও চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যুক্ত হচ্ছে। সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। ফলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এফএমসিজি) জন্য বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর সাড়ে ১০ শতাংশ হারে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ হবে।
কোভিড সবকিছুই পাল্টে দিচ্ছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০০৫ সালে তা নেমে এসেছিল ৪০ শতাংশে। এরপর ক্রমে দারিদ্র্যের হার কমেছে। যেমন, কোভিডের আগে সরকারি হিসাবে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। মহামারিতে কত মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, এর কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম জরিপ করে বলছে, ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দরিদ্র। অর্থাৎ, এক কোভিডেই বাংলাদেশ প্রায় ২০ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category