• রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৪ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

Reporter Name / ২০৫ Time View
Update : শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গ্রেপ্তারদের মধ্যে হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ডও রয়েছেন। গ্রেপ্তাররা হলেন- ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার (৩৮), নাছির উদ্দিন (৩৮) ও মোরশেদুল আলম (৫১)। র‌্যাব জানায়, বিগত ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকা- সংঘঠিত হয়। গ্রেপ্তাররা মিল্কীর সহযোগী ছিলেন। মিল্কী হত্যার সঙ্গে টিপু জড়িত ছিলেন বলে গ্রেপ্তাররা সন্দেহ করতেন। মিল্কী হত্যার মামলার এজহারে টিপুর নামও দেন তারা। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রমে টিপুর নাম বাদ পড়ায় গ্রেপ্তারদের মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল উল্লেখ করে র‌্যাব জানায়, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল। এ ছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তারসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়েও টিপুর সঙ্গে গ্রেপ্তারদের দ্বন্দ্ব ছিল। আর এসব দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই টিপুকে হত্যা করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, টিপুকে হত্যা করার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করেন পরিকল্পনাকারীরা। আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এ হত্যাকা-ে। ঘটনার ১২ দিন আগে মুসা দুবাই চলে যান। সেখানে বসে তিনি কিলার নিয়োগ করা থেকে শুরু করে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর আগে টিপু-প্রীতি হত্যাকা-ের ৪৮ ঘণ্টা পর মো. মাসুম ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। পুলিশ বলছে, মাসুমই ব্যস্তসড়কে প্রকাশ্যে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে। গ্রেপ্তারের পর ব্রিফিংয়ে ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, হত্যার পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশত্যাগ করতে চেয়েছিলেন গ্রেপ্তার মাসুম ওরফে আকাশ। তবে আকাশের একমাত্র ‘টার্গেট’ ছিলেন জাহিদুল ইসলাম টিপু। মাসুম যখন গুলি করছিলেন, তখন অস্ত্রের ট্রিগার চেপে ধরে রেখেছিলেন। সেই গুলিতে টিপুর সঙ্গে নিহত হন রিকশাআরোহী প্রীতিও। কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যার ঘটনা পরে জেনেছেন মাসুম। এছাড়া টিপু-প্রীতি হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরফান উল্লাহ দামাল নামে একজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামি ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এ ছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা করেন। তারা আমার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার পর র‌্যাব এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। তদন্তের একপর্যায়ে গত শুক্রবার মুগদা, শাহজাহানপুর ও মিরপুর অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টিপু ও গ্রেপ্তারদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাত। এর একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যার ঘটনা ঘটে। এলাকায় মিল্কীর সহযোগী হিসেবে পরিচিতি টিপু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তাররা। গ্রেপ্তাররা জানান, মিল্কী হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে টিপুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা। এ ছাড়া মিল্কী হত্যা মামলার বাদীর মাধ্যমে টিপুর নাম এজাহারে দেন ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা। পরে আদালতের মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতি পান টিপু। এতে ক্ষুব্ধ হন ওমর ফারুকরা। পরে ২০১৬ সালে একই দ্বন্দ্বের জেরে টিপুর সহযোগী রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবুকে হত্যা করে ওমর ফারুকের দল। বর্তমানে রিজভী হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। গ্রেপ্তাররা আরও জানান, তাদের ধারণা টিপুর কারণেই রিজভী হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। এরইমধ্যে মামলার বাদী রিজভীর বাবা আবুল কালামের সঙ্গে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু টিপুর কারণে মীমাংসায় যাননি কালাম। এক পর্যায়ে কালামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুকরা। কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে তারা যখন দেখলো, কালামের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, তখন তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন, যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা ছিল, কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে চালাতে পারবেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় তিন মাস আগে, রিজভী হত্যা মামলার সাক্ষ্য শেষে আদালত চত্বর এলাকায় টিপু হত্যার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে ওমর ফারুকরা। র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকা-ের অন্যতম সাক্ষী মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য দিতে বিরত থাকতে বলেন। মোরশেদুল আলম একে রাজি থাকলেও টিপুর চাপে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তীতে রিজভী হত্যাকা-ে গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেন মোরশেদুল আলম। এরপর টিপু হত্যা বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন মোরশেদুল। হত্যাকা-টি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য গত ১২ মার্চ দুবাই যান হত্যার নির্দেশদাতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা। র‌্যাব বলছে, হত্যাকা-টি দেশে সংঘটিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। ঘটনার আগে দেশ থেকে নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসার কাছে তথ্য দিতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর, নাছির আনুমানিক চারবার টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে জানান। পরবর্তীতে টিপু গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখেন। সেই সঙ্গে তার অবস্থান সম্পর্কে ফ্রিডম মানিক নামে আরেকজনকে জানান। সেই তথ্য অনুযায়ী হত্যাকা-টি ঘটায় কিলার। মূলত, দুবাই বসে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন মুসা। আর এই হত্যার জন্য চুক্তি হয় ১৫ লাখ টাকা। এই ১৫ লাখ টাকার কে কত দেবে তাও ভাগ করে দেন মুসা। ৯ লাখ টাকা দেন ওমর ফারুক। বাকি ৬ লাখ টাকা দেন গ্রেপ্তার নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মুসা। দুবাইয়ে যাওয়ার আগে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান মুসা, হুন্ডির মাধ্যমে আরও ৪ লাখ টাকা মুসাকে দেওয়া হয়। বাকি ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। ৬ লাখের মধ্যে র‌্যাব গ্রেপ্তারের সময় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকা-ের সময় কিলার নাছিরকে ঘটনাস্থলের পাশে সাদা শার্ট, জিনস প্যান্ট ও কেডস পরা অবস্থায় দেখা যায়। টিপুকে হত্যার পর নাছির তার মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেন ও সিমকার্ড ভেঙে ফেলের। পরবর্তীতে মোবাইল ও সিমকার্ডটি উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ছাড়া ঘটনার আগের দিন নাছির সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একদিন অবস্থান করেছিলেন। কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন টিপুকে নজরদারি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে। শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category