• সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
দদুর্নীতির বড় অভিযুক্তরা পাশের দেশে আছেন: দুদক চেয়ারম্যান এবারও আসছে তীব্র তাপপ্রবাহ, নেই তেমন প্রস্তুতি লিবিয়ায় দুই গণকবর থেকে ৪৯ অভিবাসী-শরণার্থীর মরদেহ উদ্ধার তিন জিম্মির বিনিময়ে ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যে সাবেক এমপি চয়নকে গ্রেফতার করলো পুলিশ হাওরে কৃষি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার ‘ডেভিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই ২৫ কর্মকর্তার লকারই পায়নি দুদক কৃষিঋণ বিতরণ কমায় বোরো উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই: সেনাপ্রধান

রড-সিমেন্টের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না

Reporter Name / ৩০৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছিল নির্মাণকাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ রডের দাম। খুচরা বাজরে প্রথমবার প্রতি টন রডের দাম গিয়ে ঠেকেছিল ৮৯ থেকে ৯৩ হাজার টাকায়। এতে বড় ধাক্কা লাগে নির্মাণকাজে। ক্ষতির মুখে পড়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পসহ ব্যক্তিখাতের নির্মাণকাজ। সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই অস্থির হয়ে উঠেছে সিমেন্টের বাজার। চাহিদা কম থাকলেও হু-হু করে বাড়ছে পণ্যটির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ১২০ টাকা। ডিলার ও মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের সব কারখানাগুলো চালু ও উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। সরবরাহ থাকলেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। রডের দাম বাড়ার কারণে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরাও প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবহারকারীরা বলছেন, একটি অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে বিপুল পরিমাণ রড ও সিমেন্ট মজুত করেছে। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদা কম থাকলেও সিন্ডিকেট করে রড ও সিমেন্টের দাম বাড়াচ্ছে চক্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাজারের চাহিদার চেয়ে বেশি। সিমেন্ট কারখানাগুলোর কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে ক্লিংকার (কাঁচামাল) আমদানি হয়। বেশিরভাগ আমদানি হয় ভিয়েতনাম থেকে। জানা গেছে, এক মাস আগেও টনপ্রতি ৬০ গ্রেডের রডের দাম ছিল ৭৪ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। একই রড বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৯ থেকে ৯৩ হাজার টাকা। রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে রডের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। তবে এটা মানতে নারাজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও ক্রেতারা। তারা বলছেন, আসন্ন বাজেটে রড উৎপাদনকারীরা সরকারের কাছে ভর্তুকি চায়। এজন্য সুকৌশলে রডের বাজারে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। অবকাঠামো ও নির্মাণ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছে, আমাদের দেশে একটি বাজে সংস্কৃতি রয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে অসাধু চক্র তার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কথা বলে রডের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। কেননা এসব রড তৈরির কাঁচামাল যুদ্ধের আগেই আনা হয়েছে। রড উৎপাদনকারীরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের উচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, রড উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে রড উৎপাদনের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। এখানকার মূল বিষয় হচ্ছে, রড উৎপাদনকারীরা এ খাতে ভর্তুকি চায়। আসন্ন বাজেটে তারা সেটা আদায় করতে চায়। এজন্য তারা রডের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছে। তিনি বলেন, রডের দাম বৃদ্ধির কারণে আবাসন খাতসহ অন্যান্য নির্মাণ খাতের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা শুধু বেসরকারি খাতের সমস্যা বিষয়টি এমন নয়। এটা সরকারি বহু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের সর্বত্র হাজার হাজার অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এজন্য সার্বিক স্বার্থে রডের দাম বৃদ্ধির কারণগুলো চিহ্নিত করা দরকার। আমরা আশা করব, বাস্তব চিত্র বিশ্লেষণ করে রডের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা ব্যাখ্যা দিক বা সংবাদ সম্মেলন করে জানাক। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআর) সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পুরোনো জাহাজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে টনপ্রতি পুরোনো জাহাজের দাম ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলার। বর্তমানে সে দাম বেড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার ছুঁয়েছে। এর সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স, কাটিংকসহ অন্যান্য খরচ। রডের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে এটাও। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, দেশে স্বয়ংক্রিয় ইস্পাত কারখানা রয়েছে ৩০টি। আর সনাতনী পদ্ধতির কারখানা রয়েছে প্রায় ১০০টি। দেশে বছরে রডের চাহিদা রয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। এ হিসাবে মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন থেকে ৫ লাখ টন রডের প্রয়োজন হয়। এসব রড তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে পুরনো লোহার টুকরা আমদানি করা হয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় জাহাজভাঙা শিল্প ও স্থানীয় ভাঙ্গারির বর্জ্য থেকে। আরও জানা যায়, রডের দাম বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রতি টন স্ক্র্যাপ কিছুদিন আগেও ৪৫০ ডলারে কেনা যেত। এখন সেটির এলসি দেওয়া হয়েছে ৬২০ ডলার করে। এ ছাড়া কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে উন্নয়ন কাজের জন্য রডের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তিন বছর আগে যদি প্রতিদিন ১০০ টন রড প্রয়োজন হতো এখন তা বেড়ে এক হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সিমেন্ট তৈরির সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। করোনার পর থেকে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সিমেন্ট তৈরির কিছু কাঁচামালের দামও বেড়েছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বেড়েছে। রড উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বৈশ্বিক বাজারে দাম বাড়ার কারণেই মূলত রডের দাম বেড়েছে। তবে রডের বাজারের এই অস্থিরতা কবে কবে কাটবে সে বিষয়ে কারও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category